ঢাকা: কলকাতা শহরের দুটি মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন নারীরা। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নয়, ইচ্ছে করলে রাতভর নামাজ পড়তে পারবেন তারা। কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান ও নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষ এ সুযোগ করে দিচ্ছে।
মসজিদে মেয়েদের নামাজ পড়ার সুযোগ করে দিতে সম্প্রতি ‘অল বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফ থেকে ওয়াকফ বোর্ডসহ কলকাতার দু’টি মসজিদ কমিটিকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে মসজিদ দুটির কর্তৃপক্ষ।
‘অল বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইয়াহিয়া সম্প্রতি ওই দুই মসজিদ কমিটির কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে জানান, ‘প্রতিদিন বাইরের প্রচুর লোক নামাজ আদায়ের জন্য আসেন। তাদের মধ্যে অনেক বিদেশি নারীও থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজও এমন ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যমণ্ডিত দুই মসজিদে পর্দা বজায় রেখে নারীদের নমাজ আদায়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই ধরনের মসজিদে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকাটা খুব জরুরি। না থাকলে তা লজ্জার ও বিস্ময়ের।’
ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ওই চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি। চিঠি পাওয়ার পরই তিনি দুই মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘মুসলিম সমাজে নারী-পুরুষের বিভেদ থাকা অনুচিত। মসজিদে নারীদের নমাজ পড়তে কোনো বাধা নেই।’
নারীরা যাতে নামাজ পড়তে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্মতি জানিয়েছে টিপু সুলতান ও নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের মোতায়াল্লি আনোয়ার আলি শাহ বলেন, ‘রমজান মাসে টিপু সুলতান মসজিদের ভিতরে নারীদের ইফতারের পরে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা বছর পাঁচেক আগে থেকে চালু হয়েছে। তবে এখন থেকে যাতে বছরভর তারা নমাজ পড়তে পারেন, তার ব্যবস্থা আমরা দ্রুত চালু করতে চাই। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত জায়গাও রয়েছে।’
টিপু সুলতান মসজিদের সহকারী মোতায়াল্লি শাহিদ আলম বলেন, ‘নারীরা যাতে সারা বছরই এখানে নামাজ পড়তে পারেন, তার ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা আগে থেকেই ছিল। এবার ওয়াকফ বোর্ড মারফত প্রস্তাব পেয়ে সেই উদ্যোগ দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে চাই।’
এ ব্যাপারে নাখোদা মসজিদের অছি পরিষদের সদস্য নাসের ইব্রাহিম বলেন, ‘ইসলাম নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার দিয়েছে। নাখোদা মসজিদে বাড়তি জায়গা রয়েছে। সেখানে নারীদের জন্য আলাদাভাবে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মুরারইয়ে ঈদে নারীদের প্রকাশ্যে নামাজ পড়া শুরু হয় ২০০৫ সালে। মাস চারেক আগে প্রতি শুক্রবার মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া চালু করেছেন বর্ধমান শহরের গোদার মুসলিম নারীরা।
ভারতের তেলঙ্গানা, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা ও মুর্শিদাবাদে বেশ কিছু জায়গায় মসজিদে নারীরা নামাজ পড়ার সুযোগ পান।
মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার বিষয়ে সাবেক শিক্ষিকা মীরাতুন নাহারের ভাষ্য, ‘মানুষের ধারণা, মুসলিম সমাজে নারীদের ঘরবন্দি করে রাখা হয়। মসজিদে নারীরা নামাজ পড়ার সুযোগ পেলে সেই ধারণাটা ভাঙবে। পাশাপাশি, নারীরাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।’