
শেরপুর থেকে ঘুরে এসে: ঘুরে ফিরে লুঙ্গিনিসের সেই কথাটিই মনে পড়ে ‘সৌন্দর্য’ তার ভিতর থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। সৌন্দযের্র এই চিরায়িত স্বরূপ উম্মোচন করতে পারেন কেবল তারাই ‘যারা হন সৌন্দর্য পিয়াসী। তাই এখানে ভ্রমণে আসা হাজার হাজার পর্যটকদের মুখে প্রচলিত একটি কথা ‘শেরপুরের গতরে গতরে (শরীরে শরীরে) সৌন্দর্যের অহংকার’।
এই অহংকারের আগুনে পোড়তে এবার শেরপুর জেলা শহর থেকে ত্রিশ কিলোমিটার এবং সীমান্তঘেঁষা নালীতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে সতের কিলো উত্তরে ‘মধুটিলা ইকোপার্ক দর্শনে রওনা হলাম। নালিতাবাড়ী স্থল বন্দর সড়ক হয়ে মধুটিলা যাওয়ার পথে দেখে নিলাম ভরুঙ্গা, কালাপানির পাশ দিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে মধুটিলার পাদদেশে অবস্থিত রঞ্জনা ঝরনাকে। চলার পথে এর পাশে বসলে বা এর শীতল জলে ডুব সাঁতার কাটলে মনে প্রশান্তি আসে বলে এখানকার স্থাণীয় আদিবাসীদের বিশ্বাস। ৬০ থেকে ৭০ ফুট উচুতে এই সরু ঝরনাধারা যেন বর্ষায় ঝুম ঝুম শব্দ তুলার মত ছুটে চলছে অবিরাম।
আহা! এ যেন এক অনুপম রূপের ছোঁয়া। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মধুটিলা ইকোপার্কে। পাহাড়ের নানা বাঁক আর সুউচ্চ পাহাড় ঘিরে গড়ে উঠেছে এই মধুটিলা। পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়ালে ভারতের বিস্তীর্ণ বনভূমি, জনপদ আর গারো পাহাড় বেষ্টিত মোহময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এখানকার সমরেশচূড়া যে কোন ভ্রমণ পিয়াসীর প্রাণ জুড়ায়। উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের এই পশ্চাতপদ জায়গাটি আজ আধুনিক রেস্টহাউস, চূড়ায় নির্মিত অপূর্ব কারুশৈলীর ৮৮ ধাপের ৬৫ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার এবং দেশি বিদেশি পর্যটকসহ চলচ্চিত্র ও প্যাকেজ নাটক নির্মাতাদের পদচারণায় মুখরিত।
এখানে বিভিন্ন পাহাড়ের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে লেকের উপর নির্মিত হয়েছে স্টার ব্রিজ। এই ব্রিজ দিয়ে চলার পথে মধুটিলার অপার সৌন্দর্যের ভিন্নমাত্রা উপভোগ করার সুযোগ মেলে। কারো মন চাইতে পারে লেকের শান্ত স্নিগ্ধ জলপাই রং জলে ডুব দিয়ে নিজের শরীর, মনকেও শান্ত দৃঢ় করতে। তাছাড়া পেডেল বোটে লেকের জলে ভেসে বেড়ানোও পর্যটকদের কম উপভোগ্য বিষয় নয়। বিশেষ করে এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরী হাতি, বানর, মৎস্যকন্যা, কুমির, বাঘ, সিংহ, ব্যাঙ, ক্যাঙারু, ঈগল, হনুমান, পেচাঁ, সাপসহ আরো অনেক প্রাণীর প্রতিকৃতি। রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানাও।
প্রাকৃতিক গজারি বনের পাশাপাশি বড় হয়ে উঠছে কয়েক বছর আগে রুপনকৃত বনজ,ফলদগাছসহ হাজার হাজার ঔষধি গাছ গুলোও। ফিরতি পথে ৬৫ ফুট ওয়াচ টাওয়ারে উঠে মনে হল মুসা ইব্রাহিম আর ওয়াসফিয়াদের মতো হিমালয় চূড়া না ছুতে পারলেও তাদের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠার অনুভূতির অংশীদার কিছুটা হলেও হতে পেরেছি; আর পেরেছি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দর্য সমস্ত সত্ত্বাজুড়ে দূর থেকে অবলোকন করতে। এ যেন ছিল প্রকৃতির সৌন্দর্যের সুধা পিয়ে অনুভবে মাতাল হওয়ার সুবর্ণক্ষণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৪
বহুমাত্রিক.কম