
ছবি-সংগৃহীত
খুলনা : রজধানী থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চার নারী জঙ্গির মধ্যে ইন্টার্নি চিকিৎসক ইসতে সিনা আক্তার ঐশী থাকায় হতবাক হয়েছেন তাঁর গ্রামের মানুষ।
খুলনায় তার পরিচিতজনরা জানিয়েছেন, ঐশী নিজে গান-বাজনা করতেন। এলাকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ। এই ঐশীর বাবা, চাচার সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের বাড়ি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মিকশিমিল গ্রামে।
ঐশীর বাবা বিশ্বাস আক্তার হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্ষ ব্যাধি বিভাগের প্রধান। তাঁর মা ডা: নাসিমা রহমানও চিকিৎসক। ঐশীর চাচা বিশ্বাস আফজাল হোসেন পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি); বর্তমানে তিনি এসপিবিএন (স্পেশাল প্রোটেশশন ব্যাটালিয়ান)-এর প্রধান।
ঐশী’র গ্রেপ্তারের খবরে তাঁদের গ্রামে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সকলেরই মুখে এক কথা, ওই পরিবারের মেয়ে, এক সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মী ঐশী কিভাবে জঙ্গি হ’ল! খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মিকশিমিল গ্রামের আব্দুর রউফ বিশ্বাসের পরিবার আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিত; যদিও আব্দুর রউফ কিছুদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
মিকশিমিল বাজারের কাছেই বিশ্বাসদের বাড়ি। ঐশীর দাদা বিশ্বাস আব্দুর রউফ-এর বয়স একশ’ বছর। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, শেষ বয়সে বছর দশেক আগে তিনি কিছুদিন বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এখন তিনি বাড়িতে বার্ধক্য জীবন কাটাচ্ছেন।
বিশ্বাস আব্দুর রউফের তিন ছেলে এবং তিন মেয়ে। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আক্তার হোসেন ও ছোট ছেলে শাহীন হাসান -দু’জনেই ডাক্তার। আর এক ছেলে আফজাল পুলিশের বড় কর্মকর্তা। মেয়ে তিনজন পারুল, তারু ও মিনা। পারুল রংপুরের একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। তারু গৃহিনী। মিনা চিকিৎসক। তিনি স্বামীকে নিয়ে জাপানে থাকেন।
প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিশ্বাস রউফ পুরনো মানুষ। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে চিকিৎসক; এক ছেলের (আক্তার হোসেন) বউও চিকিৎসক। আর এক ছেলে (বিশ্বাস আফজাল হোসেন) পুলিশের ডিআইজি। ঐশীও খুবই মেধাবী। ভালো গান গাইতো। এলাকার অনুষ্ঠানে তাকে গান গাওয়ানোর জন্যে আনা হতো। সেই মেয়ে কিভাবে জঙ্গি হ’ল!’
আর এক প্রতিবেশী মো: আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বিশ্বাস আক্তার হোসেনের পিতা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। আক্তার হোসেন নিজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন; এখন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁর মেয়ে জঙ্গি, একথা কি করে বিশ্বাস করি! কিন্তু ঘটনা বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে। আমরা হতবাক!’
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, একই এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক গাজী আব্দুল হাদী বলেন, ‘বিশ্বাস আক্তার হোসেন ও তার পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা। ঐশীর দাদি রত্নগর্ভা হিসেবে পুরষ্কৃত হয়েছেন।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য সাইদুর রহমান পিয়ারু বলেন, ‘বছর তিন-চার ঐশীর মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সে গান-বাজনা ছেড়ে দেয়। বোরখা ও হিজাব পড়া শুরু করে। ধার্মিক হিসেবে তার নতুন পরিচিত গড়ে উঠতে শুরু করে।’
এ বিষয়ে ঐশীর বাবা ডা: বিশ্বাস আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে ঐশী ছোট বেলা থেকেই ধার্মিক। সে বোরকা পড়ে, নিয়মিত নামাজ পড়ে। বিভিন্ন সময়ে দান-খয়রাতও করে। কিভাবে সে জঙ্গিদের সাথে যুক্ত হ’ল তা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না।’
প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্ট রাতে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান (র্যাব) রাজধানীর মগবাজার এলাকার তাদের বাসা থেকে ইন্টার্ণ চিকিৎসক ঐশীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময়ে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বক্তব্য সংবলিত ডকুমেন্ট, ছবি, দেশবিরোধী তৎপরতার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করে।
এ সময়ে আরও তিন নারীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর মধ্যে মৌ ও মোহনা নামে আরও দুই নারী সদস্য রয়েছেন। তারা জামায়াত নিয়ন্ত্রিত-পরিচালিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
এর আগে ১৫ আগস্ট সকালে গাজীপুর জেলার টঙ্গীর সাইনবোর্ড এলাকা থেকে জেএমবি নারী শাখার প্রধান আকলিমা রহমানকে র্যাব আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদকালে ঐশীসহ অন্যদের নাম প্রকাশ করে।
র্যাবের হাতে গত ২১ জুলাই গ্রেপ্তারকৃত জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান মো: মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানের স্বীকারোক্তিতে জেএমবির নারী শাখার প্রধান আকলিমা রহমানের নাম বলে। জিজ্ঞাসাবাদে আকলিমা বাকী তিন নারী-ঐশী, মৌ ও মেঘনার নাম প্রকাশ করে।
বহুমাত্রিক.কম