Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আশ্বিন ১০ ১৪৩২, শুক্রবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ, প্রভাব ফেলছে উষ্

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:০৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রিন্ট:

বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ, প্রভাব ফেলছে উষ্

ফাইল ছবি

জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিস্থাপনের জন্য আণবিক হাইড্রোজেনের প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বৃদ্ধির সাথে সাথে, বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের সম্ভাব্য লিকেজ এবং এর পরিবেশগত পরিণতির দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। হাইড্রোজেন সরাসরি গ্রিনহাউস গ্যাস নয়, তবে এর রাসায়নিক বিক্রিয়া গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেন, ওজোন এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক জলীয় বাষ্পের প্রাচুর্য, সেইসাথে অ্যারোসলের প্রাচুর্যকে পরিবর্তন করে।

শিল্প যুগের আগে থেকে বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  একটি নতুন রেকর্ড দেখায় যে এই হালকা গ্যাসটি কতটা তীব্রভাবে পরিবর্তিত হয়েছে - এবং কেন এটি জলবায়ু পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাতাসে হাইড্রোজেনের একটি নতুন দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ড তৈরি করেছেন, যা প্রায় ১,১০০ বছরের ডেটা নিরীক্ষণ করে তৈরী করা হয়েছে । 

এতে দেখা যাচ্ছে, ১৮০০ সালের শুরুর দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ছিল প্রায় ২৮০ পার্টস পার বিলিয়ন, আর এখন তা প্রায় ৫৩০ পার্টস পার বিলিয়ন ছুঁয়েছে। এই বাড়তি অংশ সরাসরি জ্বালানি ব্যবহারের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। কয়লা, তেল, গ্যাস বা এমনকি বায়োমাস পুড়লেও উপ-উৎপাদন বা বাইপ্রোডাক্ট  হিসেবে হাইড্রোজেন নির্গত হয়। হাইড্রোজেন অতি ক্ষুদ্র ও অস্থির একটি গ্যাস। বরফকণার মধ্যে থাকা হাইড্রোজেন সহজেই বেরিয়ে যায় যখন সেগুলো মেরুর ড্রিল সাইট থেকে ল্যাবে নিয়ে আসা হয়। তাই এতদিন পুরনো রেকর্ডগুলো সঠিক ছিল না। এবার বিজ্ঞানীরা সরাসরি গ্রিনল্যান্ডের বরফের ওপরেই যন্ত্রপাতি বসিয়ে পরীক্ষা করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইরভাইনের গবেষক জন প্যাটারসন জানিয়েছেন, বরফের নমুনা বের করার পরপরই সেগুলোকে পরিষ্কার করে সিল করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে সঙ্গে সঙ্গে গলনকক্ষে বিশ্লেষণ করা যায়। 

এই নতুন পদ্ধতিতে তারা শত বছরের সীমারেখা ভেঙে অনেক দীর্ঘ সময়ের রেকর্ড পেলেন। ডেটাতে দেখা যাচ্ছে, শুধু বৃদ্ধি নয়, কিছু সময় পতনও ঘটেছে। যেমন ১৬শ থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত “লিটল আইস এজ”-এর সময় হাইড্রোজেন প্রায় ১৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। আরও তদন্তের জন্য, গবেষক দলটি জৈব-ভূ-রাসায়নিক মডেলের উপর নির্ভর করেছিল, যা পরামর্শ দেয় যে প্রাকৃতিক হাইড্রোজেন চক্রগুলো  জলবায়ু দ্বারা অপ্রত্যাশিভাবে  পরিবর্তিত হচ্ছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, হাইড্রোজেন নিজে তাপ আটকে রাখে না, তবে পরোক্ষভাবে জলবায়ুকে উষ্ণ করে। বাতাসে হাইড্রোজেন মিথেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে হাইড্রক্সিল র‍্যাডিক্যালের জন্য—যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক “পরিষ্কারক” হিসেবে কাজ করে। 

বেশি হাইড্রোজেন থাকলে হাইড্রক্সিল কম মেলে, ফলে মিথেন ভাঙতে সময় বেশি লাগে এবং এর উষ্ণায়ন প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়। বর্তমানে অ্যাটমোস্ফিয়ারে হাইড্রোজেনের মাত্রা প্রায় ০.৫ পার্টস পার মিলিয়ন। অনুমান করা হচ্ছে, এটি মানুষের তৈরি গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রায় ২ শতাংশের জন্য দায়ী। শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে জ্বালানি পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানার নির্গমন থেকেই এই বৃদ্ধির প্রধান উৎস। এখন “হাইড্রোজেন ইকোনমি” নিয়ে নতুন আলোচনা হচ্ছে। সবুজ হাইড্রোজেন জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে বিদ্যুতায়ন কঠিন। কিন্তু যদি উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন লিক হয়, তবে তা মিথেন সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলবে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেক্স আর্চিবাল্ড সতর্ক করেছেন যে, ভবিষ্যতের হাইড্রোজেন-ভিত্তিক ব্যবস্থায় লিক প্রতিরোধ করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables