ফাইল ছবি
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি-এর সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরেই ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদির ওপর কাপুরুষোচিত গুলি এবং পরিকল্পিতভাবে গণপরিবহনে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাগুলো কোনো সাধারণ ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’ নয়। এগুলো সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা সরাসরি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে সহিংস হুমকি এবং দেশের গণতান্ত্রিক অস্তিত্বের ওপর নির্লজ্জ হামলা।
শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আ স ম রব।
সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, ‘সভার রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়-এই নজিরবিহীন সহিংসতা কেবল একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ। এই সংকটের কারণ ‘অভ্যুত্থানকারী শক্তি’র মাঝে অনাঙ্ক্ষিত বিভক্তি এবং লক্ষ্যহীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা। আজ অভ্যুত্থানকারী নেতৃত্ব ও শক্তিকে উপলব্ধি করতে হবে-তাদের ক্ষমতার মোহ, স্বার্থকেন্দ্রিক বিভাজন এবং কৌশলগত সংঘাতই এই ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। শুধু মাত্র কোনো ‘অদৃশ্য বা তৃতীয় পক্ষের উসকানি’র মতো চর্বিতচর্বণ গল্পই যথেষ্ট নয়। সত্য আরও কঠোর: অভ্যুত্থানকারী শক্তির অনৈক্য এবং দায়িত্বহীন ভূমিকা আজ এই সহিংসতায় বড় ইন্ধন যুগিয়েছে।
এই বিভাজনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো-এটি রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি, অর্থাৎ নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থাকে চূর্ণ করে এক ভয়ানক শত্রুতার বীজ বপন করছে। রাজনৈতিক পক্ষগুলো যখন সাংবিধানিক প্রতিপক্ষ না হয়ে একে অপরকে ‘বিলুপ্ত করার শত্রু’ হিসেবে দেখতে শুরু করে, তখন রাষ্ট্র তার নৈতিক ভিত্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে, সহিংসতা রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠে, আর গণতন্ত্র পরিণত হয় একটি ভীতিপ্রদ, রক্তক্ষয়ী ও অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতায়।
দেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ কেবল কোনো ব্যক্তি, দল বা নির্দিষ্ট নির্বাচনের বিরুদ্ধে নয়-এটি সরাসরি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পবিত্রতা, সামাজিক সংহতি এবং রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রমূলক হুমকি। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, রাজনৈতিক বিভাজন এমন এক বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছেছে যেখানে মতের পার্থক্য আর গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার সুস্থ বাতাবরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং তা রূপান্তরিত হয়েছে সংঘাত, আক্রমণ, বানচাল ও রাষ্ট্রীয় ভয়ের সংস্কৃতিতে।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করছি-এই রাজনৈতিক বিভাজনকে যদি এখনই কঠোরভাবে মোকাবেলা না করা যায়, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যদি অভ্যুত্থানের অংশীজন এবং বিকশিত সমাজশক্তি অর্থাৎ পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না যায়-তাহলে এর অনিবার্য পরিণতি কেবল কোনো দল বা সরকারের পতন নয়; বরং সমগ্র রাষ্ট্র ও জাতির জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী বিশৃঙ্খলা ও অমানিশার পথ সুগম হবে। দেশ রক্ষার প্রথম এবং অবিচ্ছেদ্য শর্ত হলো রাজনৈতিক সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংবিধানিক দায়িত্বশীলতা এবং গণতান্ত্রিক আচরণে দ্রুত প্রত্যাবর্তন। বিভাজনের রাজনীতি এবং সংঘাতের পথ বন্ধ না হলে, রাষ্ট্র নিজেই অনিবার্যভাবে এক অনিশ্চিত ও ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, স্থায়ী কমিটির সদস্য তানিয়া রব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজ মিয়া, অ্যাডভোকেট কেএম জাবির, মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।’




