Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

শ্রাবণ ১৫ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫

উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:০৬, ৩০ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২২:০৭, ৩০ জুলাই ২০২৫

প্রিন্ট:

উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫

ছবি- সংগৃহীত

কুমিল্লার মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে করা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

আসিফ মাহমুদের অনুসারীদের ভাষ্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারীরা তাঁদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছেন। এতে তাঁদের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন দাবি করেছেন, আসিফের অনুসারীরা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে তাঁদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছেন। এতে বিএনপির অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উপজেলা সদরের আল্লাহু চত্বরে এসব ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে মুরাদনগর থানার সামনে এসে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরে উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিএনপির নেতা কায়কোবাদের অনুসারীরা।

ওই ঘটনার জেরে ‘মুরাদনগর উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে উপদেষ্টা আসিফের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আসিফের অনুসারীদের মিছিলটি বিকেল পাঁচটার দিকে স্থানীয় ডি আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু হয়ে আল্লাহু চত্বরের দক্ষিণ পাশে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় চত্বরের উত্তর পাশে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন কায়কোবাদের অনুসারীরা। দুই পক্ষের মাঝে পুলিশের অবস্থান ছিল। এ সময় আসিফের অনুসারীরা ‘চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চাঁদাবাজ ধর, জেলে ভর’, ‘মুরাদনগরের মাটি, আসিফের ঘাঁটি’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ আসিফের অনুসারীদের সমাবেশে অন্য প্রান্ত থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। আসিফের অনুসারীরা কায়কোবাদের অনুসারীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা কিছুটা পেছনে গিয়ে পাল্টা ধাওয়া দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা অন্তত পাঁচজন সাংবাদিককে পিটিয়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আহত করা হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে উপস্থিত লোকজন ও ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আসিফের অনুসারীরা মুরাদনগর থানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। আর কায়কোবাদের অনুসারীরা আল্লাহু চত্বরসহ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আসিফের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।

আহত সাংবাদিকেরা হলেন, বেসরকারি টেলিভিশন স্টার নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মারুফ, খোলা কাগজের জেলা প্রতিনিধি শাহ ইমরান, এস এ টিভির ক্যামেরাপারসন এ এস বাপ্পী, নয়াদিগন্তের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার ফাহিম মুনতাছিম প্রমুখ। সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘হামলাকারীদের একজন আমার পায়ে লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। আমাকে বারবার বলছিল, “ভিডিও বন্ধ কর, ক্যামেরা বন্ধ কর”। আসিফের অনুসারীদের ওপর যারা প্রথমে হামলা করেছিল, তারাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।’

আসিফের অনুসারী উপজেলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মিনাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে কায়কোবাদের এক অনুসারীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে কায়কোবাদের লোকজন থানায় হামলা করে ওই চাঁদাবাজকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এসব ঘটনায় কায়কোবাদের অনুসারীরা উপদেষ্টা আসিফের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

তাঁরা আসিফের বিরুদ্ধে একের পর এক বিষোদ্‌গার করছেন। কয়েকটি গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসিফের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় আজ বিকেলে মুরাদনগরের সর্বস্তরের জনগণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাঁরা কর্মসূচি পালন করছিলেন। কর্মসূচির শেষ দিকে এসে কায়কোবাদের অনুসারীরা হঠাৎ শত শত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। এতে তাঁদের অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বর্তমানে কার্যক্রম স্থগিত) উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী বলেন, কায়কোবাদের অনুসারীরা কিছু হলেই আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। আসিফ মাহমুদ দীর্ঘদিনের অবহেলিত মুরাদনগরের উন্নয়ন করছেন, এটা তাঁদের সহ্য হচ্ছে না। তাঁরা মুরাদনগরের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চান। আজকে প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এ ঘটনার পর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন (অঞ্জন) দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ নিয়ে কথা বলেন। তিনি এ ঘটনার জন্য আসিফ মাহমুদের লোকজনকে দায়ী করেন। মহিউদ্দিন বলেন, গত দুই দিন বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি করছে। আজ ছাত্রদলের কর্মসূচি ছিল। তাদের লোকজন বিক্ষোভ মিছিল করতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। তখন ওই পক্ষের সমাবেশ থেকে দলীয় কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরে নেতা-কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। তাঁরা তাঁদের নেতা কায়কোবাদকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়েছেন। তাঁদের হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। মহিউদ্দিনের দাবি, বিএনপি কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলেই তাঁরা পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেন। আসিফ মাহমুদের নির্দেশে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা এনসিপির লোকজন। আর মুরাদনগরে এনসিপি মানে আওয়ামী লীগ।

মুরাদনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিন কাদের খান বলেন, আজ এনসিপির লোকজনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ছিল। তাঁদের সমাবেশ চলাকালে ইটপাটকেল নিক্ষেপকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। যাঁরা উপদেষ্টার পক্ষে সমাবেশ করেছেন, তাঁদের লোকজন কর্মসূচির বিষয়ে লিখিতভাবে পুলিশকে জানিয়েছিল। তবে বিএনপি পাল্টা কর্মসূচি দিতে পারে, এমন তথ্য পুলিশের কাছে ছিল। এ জন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। তাঁরা ঘটনার বিষয় বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables