
ছবি: বহুমাত্রিক.কম
গাজীপুর : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী পূর্বপাড়া এলাকায় আলী পেপার মিলের কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় কারখানার আশপাশে গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে, কমে গেছে পশুপাখির আনাগোনা, পরিবেশ হারাচ্ছে তার ভারসাম্য।
শ্রীপুর উপজেলার টেংরা, সাইটালিয়া, সাতখামাইর, পেলাইদ ও তেলিহাটি মৌজার প্রায় হাজার একর জমি নিয়ে সমৃদ্ধ ছিল সাইটমনিগড় (স্থানীয় নাম)। সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল জুড়ে ছিল বিভিন্ন প্রাণীর অভয়াশ্রম। বনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ। এ তালিকায় অনেক আবার বিলুপ্ত। উপজেলা জুড়েই বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহের কারখানা ভাবা হত এই সংরক্ষিত বনকে। তবে এই বনের বিশুদ্ধ পরিবেশের জন্য হুমকী হয়ে উঠেছে স্থানীয় আলী পেপার মিলস নামের একটি কারখানা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নয়নপুর বাজার থেকে পূর্ব দিকের ১৪ কিলোমিটারের পাঁকা সড়কটি বরমী বাজারে গিয়ে মিলেছে। সড়কটিতে প্রবেশ করলেই দু’পাশের অসংখ্য সবুজ গাছ-গাছালির বিশুদ্ধ ঠান্ডা বাতাস ও পাথির কলরবে মন ছুঁয়ে যায়। তালতলী বাজার থেকে দরগারচালা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়েই রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে আলী পেপার মিল নামের একটি কারখানা।
কারখানায় কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত বয়লারের কারণে সৃষ্টি হয় কালো ধোঁয়ার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারখানা থেকে অনবরত বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া ও হাওয়াই বর্জ্য (ছাই)। এতে কারখানার আশপাশের গাছগুলোতে মরক ধরেছে। সম্প্রতি কমে গেছে বন্যপ্রাণী ও পাখির উপস্থিতি। কমে গেছে আশপাশের কৃষকের ফসল উৎপাদন। কৃষি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকেই।
সাইটালিয়া গ্রামের গৃহবধূ আমেনা আক্তার বলেন, শুনছি একটা এলাকায় মিল কারখানা হলে এলাকা উন্নত হয়। আর এই কারখানাটি আমাদের এলাকাকে ধ্বংস করছে। কারখানার কালো ধোঁয়া ও ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত কালি আমাদের ঘরে ঢুকে। এতে বিছানার চাদর ও ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়। ঠিকমতো আমরা খাওয়া দাওয়া করতে পারিনা।
তালতলী মুরগীর বাজার এলাকার কৃষক আব্দুল কাদের লালমিয়া বলেন, কারখানার ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত কালি আমাদের ক্ষেত ও ফসলের ওপর গিয়ে পড়ে। কোন ধরনের সবজি চাষ করতে পারি না। যখন ধোঁয়া পরিবেশে ছাড়া হয় তখন ঠিকমতো নিঃশ্বাস নেয়া যায় না। এছাড়াও কারখানার নির্গত ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই বের হয়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। গবাদি পশুর খাবার সংকটও তৈরি হয়েছে।
তালতলী পূর্বপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘাষের ওপর কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ক্যামিকেল ছড়িয়ে পড়ায় গবাদি পশুর জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘাষের ওপর জমে থাকা ছাই খেয়ে তার একটি গাভী সম্প্রতি মারা যায়। এলাকার অনেক গবাদি পশু অসুস্থ হচ্ছে আলী পেপারের থাবায়। স্থানীয়ভাবে বসবাসকৃত সাধারণ মানুষও নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য নাসির উদ্দিন বলেন, এই পেপার মিলের কারণে কয়েক কিলোমিটার এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের। এক সময়ের সবুজ অরণ্য এখন বিবর্ণ হয়ে স্থানীয় পরিবেশ বিষাক্ত হয় পড়ছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। তাই এখন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি।
সংরক্ষিত বনের পাশে গড়ে উঠা এই কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও হাওয়াই বর্জ্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছাড়াও স্থাানীয় পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জার আনিছুর রহমান।
তিনি বলেন, এই বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। আমরা তাদের বিষয়টি অবহিত করেছে।
বহুমাত্রিক.কম