ঢাকা : স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগোলেও, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাড়তি বোঝা বাংলাদেশকে সামলাতে হচ্ছে বলে আবারো বিশ্ব দরবারে উত্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বিকেলে জাতিসংঘের মূল অধিবেশনের ফাঁকে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সাইড লাইন বৈঠকে এই কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত শান্তিরক্ষা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া, সাইবার নিরাপত্তায় সব দেশকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি জাতিসংঘকে আরো জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাইটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন দ্য ফোরথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন’ শীর্ষক সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত দশ বছরে অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাম্প্রতিক সংকট বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জন্যে অতিরিক্ত চাপ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মানুষের ভরন পোষণ করা। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাদ্য চিকিৎসা সুযোগ সুবিধা সবই দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সমর্থন জানাচ্ছে এবং সাহায্য সহযোগিতা করছে।
এর আগে ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, নানামুখী সংকটে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত সৈন্যদের যৌন অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স অবস্থানে অটুট রয়েছে তার সরকার৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, `শান্তিরক্ষা মিশন আমাদের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা শান্তির সপক্ষে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত সৈন্যদের যৌন অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স অবস্থান রয়েছে আমাদের।`
সকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত সাইবার নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে একই স্থানে সাইবার নিরাপত্তা শীর্ষক অপর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, দেশে সাইবার অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, `বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিংয়ের কারণে আমরা বিপুল পরিমাণ অর্থ হারিয়েছি। আমরা সাইবার সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার স্থাপন করেছি বাংলাদেশে।`
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক প্রতিনিধি ইজুমি নাকামিৎসু, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান, এস্তোনিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পল টিসালু এবং জাপানের সাইবার পলিসি বিষয়ক রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওতাকাও। সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে দুটি সভায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। বুধবার এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট, ইইউ, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধী এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।