সারিয়াকান্দির চরে এবার চরম বন্যা দেখা দিল। আমনের কৃষি বীজতলা ভাদ্রের ১৫ তারিখের দিকে ডুবল প্রথম টায়। তারপর প্রতিদিন ১ ফুট করে পানি বেড়ে পঞ্চম দিনে ১ লাফে ১৫ ফুট বেড়ে গেলে রশীদা ও সোলেমান তাদের ৫ বাচ্চা নিয়ে কোনরকমে বগুড়া শহরের শহরতলীর সাবগ্রামে এসে নামল নৌকা করে। বগুড়া শহরও পানিতে ডুবে গেছে।
সমস্যা হলো রশীদা ও সোলেমান ৫ বাচ্চা সহ সাবগ্রামে এসে ডাইভারশন লিংকেএসে নামার সময় ওদের শেষ সম্বল ৫০ টাকা নিয়ে কোনরকমে সাতমাথা পৌছায় সংগে সংগে ধুন্ধুমার বৃষ্টি শুরু হয়।ওরা এই লকডাউনের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সংগে আচ্ছাদনটার নিচে শপ শপ করে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখা না গেলে রশীদা সোলেমানকে ফিস ফিস করে বলে রহমান নগরের আব্দুল চাচার বাড়ীত গেলে ক্যাংকা হয়?
সোলেমান শুকনো মুখে বলে, হামাক থাকবা দিবি তাই? চেস্টা করে দেখি না! ৫ বাচ্চার মুখ পাংশুটে। রশীদা সাহস করে একটা চায়ের দোকানের কাছে গিয়ে বলে ভাই আমরা আজ সারাদিন কিছু খাইনি। ৫ টা বন রুটি বাকীত দেওয়া যায় নাকি? ছোকরা দোকানিটা মোবাইলের হেডফোন টা খুলে বলে `কি কোলা?
রশীদার অশ্রু বিসর্জন দেখে ৭টা বন রুটি ওর হাতে ধরায় দিয়ে দোকানি বলে টাকা দেওয়ার দরকার নাই। ট্রাফিক পুলিশটার ডিউটি শেষে নতুন আরেকজন এসে দাড়ায় ওখানটায়। বাচ্চারা হামলে পড়ে বনরুটির ওপর।বৃষ্টিত ভিজে নরম হয়ে যাওয়া বনরুটি খেতে খেতে ওরা হাটতে হাটতে বৃষ্টির পানি মুখ উঁচু করে পান করতে করতে আব্দুলের বাসা রহমাননগরের সামনে এসে থামে।বেল টিপলে আব্দুল এসে দরজা খুলে দেখে বলে `ক্যারে তোরা কেরে?
সবশুনে আব্দুল বাইরের সিড়ি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।ওরা প্রায় একমাস পর ব্রয়লার মুরগীর গিল্লা কাল্লা দিয়ে ভাত খেয়ে সিড়ি ঘরের মধ্যে গাদাগাদি করে ঘুমিয়ে পড়ে।রশীদা ভোরে উঠে পরলে আব্দুল বলে যতদিন খুশি থাক সমস্যা নাই।তবে রান্না বান্নার সব দায়িত্ব নেওয়া লাগবি।হামি বুড়া মানুষ একা আর কত দিক। তয় এই সিড়ি ঘরটায় থাকা লাগবি ১৪ দিন। কোয়ারেন্টিন গেলে একটা ঘর ছাড়ে দিমু।
এবার বন্যা দুমাস থাকবি। বলে ফিক করে হেসে ফেলে আব্দুল। মনে চলে আসে সারিয়াকান্দির চরের ব্যাপার করতোয়া পেপারে লেখা ছোট খবরটা। এই বন্যার পর ২০ বর্গমাইলের চর জাগবে যমুনায়। এই চর ৫০ বছরেও ডুববে না!! নিজে নিজেই ফিক ফিক করে হাসতে থাকে আব্দুল। সোলেমানের মরাবাবার ১০০ বিঘা নদী সিকসতি জমিটা এবার বাগানোর সুযোগ পাওয়া গেল।
বগল বাজাতে বাজাতে টিউবওয়েলটার পাশে গিয়ে ছড় ছড় করে মুততে থাকে আব্দুল । ১বছর পর। সোলেমান আর রশীদাকে রহমান নগরের বাড়ীটা লিখে দিয়ে বনানীর ডুপ্লেক্স ফ্লাটে গিয়ে উঠে আব্দুল।রশীদা আর সোলেমান তাদের ছেলেমেয়েকে স্কলাসটিক মিলেনিয়ামে পড়াচ্ছে। বেশ ভালো আছে ওরা। ওদের জন্য আব্দুল যা করেছে তাতে সবাই তাজ্জব!! লন্ডন আমেরিকা আর জার্মানিতে থাকা সোলেমানের ভাই বোনেরা প্রথম বারের মত বিশ বছর পর রহমাননগরের বাসায় এসে মজা করে গেল।
বহুমাত্রিক.কম