ছবি : বহুমাত্রিক.কম
খুলনা : হৃদয়হরণ, শাখা পিঠা, জামাই হরণ, দুধ গোকুল, দুধ কুলিসহ বিভিন্ন নামের ও স্বাদের পিঠা নিয়ে স্টল সাজিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সাথী রানী জোদ্দার। সাথী খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের সম্মান ১ম বর্ষের শিক্ষার্র্থী। পিঠা তৈরী করা শিখেছেন মায়ের কাছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল বিল ডাকাতিয়া পাড়ের এক ঝাক তরুণের আয়োজনে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের রুমরামপুর গ্রামে আয়োজন করা হয় বিল ডাকাতিয়া পিঠা উৎসব- ১৪২৪। পিঠা উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
সাথী জোদ্দার পিঠা উৎসবে অংশ গ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন, ছোট বেলায় মা, কাকীদেরকে দেখেছি পূজা পার্বণে পিঠা তৈরি করতে। তাদের কাছ থেকে পিঠা তৈরি করতে শিখেছি। তাছাড়া টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন লেখা পড়ে বৈচিত্র্যময় নানা নামের নানা স্বাদের পিঠা তৈরি করতে শিখেছি। প্রথমে পিঠা তৈরির উপকরণ নষ্ট হয়েছে। মায়ের কাছে বকুনি শুনেছি। কিন্তু এখন আর বকুনি শুনতে হয় না।
সাথী বলেন, যখন জানতে পারলাম আমাদের গ্রামে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে তখন ভাবলাম আমি তো পিঠা তৈরি করতে পারি তাহলে আমিও পিঠা উৎসবে অংশ নিব। সেই ভাবনা থেকে বান্ধবী রানু, কাঞ্চন, দিপীকা, দিপা, সাগর ও পূজাকে নিয়ে সারা রাত ধরে পিঠা তৈরি করেছি।
‘ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার’ এই শ্লোগানে আয়োজিত পিঠা উৎসবে অংশ নেয়া কাজল রানী বিশ্বাস বলেন, এক সময়ে বিল ডাকাতিয়ায় ব্যাপক ধান উৎপাদিত হত। কিন্তু ৯০ সালের দিকে বিল ডাকাতিয়া হয়ে পড়ে জলমগ্ন। ধান উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। চাল কিনে খেতে হত। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পূজা, পার্বনে পিঠা তৈরি করতে পারতাম না। বিল ডাকাতিয়ার অনেক জমি এখন জলাবদ্ধতা মুক্ত। প্রতিটি ঘরে এখন ধান ওঠে। পিঠা পুলিও তৈরি হয়। এলাকার কতিপয় তরুণ আয়োজন করে পিঠা উৎসবের তাই আমিও পিঠা তৈরি করে এনেছি। উৎসবের ৩ নম্বর স্টলটি কাজল রানী বিশ্বাসের। তিনি তৈরি করেছেন, কুমির পিঠা, জামাই পিঠা, নক্সী পিঠাসহ ২০ প্রকারের পিঠা ও পায়েস।
কল্পনা মন্ডল এনছেন সন্দেশ পিঠা, কয়েক প্রকারের কুলি পিঠা, চুড়ি পিঠা, পদ্ম পিঠাসহ নানা নামের নানা স্বাদের পিঠা পায়েস। পিঠা উৎসবে আরও স্টল সাজিয়ে বসেছিল, রুমা বেগম, নন্দীতা মন্ডলসহ ১০ জন পিঠা শিল্পী।
মেলার আয়োজকদের অন্যতম চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অরুনাভ বৈরাগী অভি বলেন, ছোট বেলায় বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা দেখেছি। দেখেছি ফসলহানি। বাজার থেকে মোটা সিদ্ধ চাল কিনে আনা হত। সেই চালের গুড়ায় পিঠা হত না। বাজার থেকে পিঠা কিনে পূজা পার্বণে খাওয়া হত। কিন্তু এখন বিল ডাকাতিয়ায় ধান হচ্ছে। হচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। তাই গ্রামের কিছু উদ্যমী তরুণ যুবককে সাথে নিয়ে গ্রামের একটি মাঠে আয়োজন করি বিল ডাকাতিয়ার পিঠা উৎসব-১৪২৪।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন, শিক্ষানুরাগী গবেষক ড. সন্দিপক মল্লিক। মুখ্য আলোচক ছিলেন কালের কণ্ঠ খুলনা ব্যুরো প্রধান পরিবেশ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক লেখক গৌরাঙ্গ নন্দী। আলোচনা করেন, খেলা ঘর আসরের কেন্দ্রিয় সহ সভাপতি শরিফুল ইসলাম সেলিম, সংস্কৃতি কর্মী শেখ শফিক আহমেদ, সালেহ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, প্রকৌশলী বেনজির আহমেদ জুয়েল প্রমূখ।
পিঠা উৎসবে অংশহণকারীদের উৎসাহ দিতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে পিঠা শিল্পীদের পুরুস্কৃত করা হয়। পরে রাতে সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠানে বিল ডাকাতিয়া ইতিহাস ঐতিহ্য ও পিঠা পুলি নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বেতার শিল্পী রবীন্দ্র নাথ মল্লিক।
বহুমাত্রিক.কম