বগুড়া : যে বয়সে হাতে থাকার কথা বই। লেখাপড়া করার কথা স্কুল কলেজে। সেই বয়সে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় মেয়েরা বসছে বিয়ের পিড়িতে। ফলে পুতুল খেলার বয়সেই হচ্ছে একাধিক সন্তানের মা। টানছে সংসারের ঘানী।
তবে এর জন্য অভিভাবকদের অশিক্ষা, দারিদ্রতা ও অসচেতনতা কিছুটা দায়ী হলেও মুলতঃ এ উপজেলায় বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রতিকার মুলক ব্যাবস্থা না থাকায় বাল্যবিয়ে চলছে প্রকাশ্যে, অবাধে ও বেপরোয়া ভাবে ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নারিল্যা গ্রামের সমির হোসেনের মেয়ে সোনিয়া (১৫) এবং গোলাপ হোসেনের মেয়ে তানিয়া (১৬) সবেমাত্র বোহাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ গ্রেডে এসএসসি পাশ করে। মেয়ে দুটির কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও ১ লা জুলাই রাতে প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে পরপর দুটি মেয়েকেই বিয়ে দেয় অভিভাবকরা। বিষয়টি সম্পর্কে বিয়ে চলাকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেয়া হলেও কোন কার্যকরি ব্যাবস্থা গ্রহন না করায় অবাধে সম্পন্ন হয় বাল্যবিয়ে।
কর্মকর্তাদের এমন দায়িত্বহীনতা আড়াল করতে এটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরদিন সকালবেলা মেয়েটির বাবামাকে ডেকে “বিয়ে দেয়া হয়নি” মর্মে মুচলেকা নেয়ার নাটক সাজানো হয়। বর্তমানে সেটিও ফাঁস হয়ে যায়। তানিয়া বগুড়া শহরের ঝোপগাড়ী গ্রামের নুর ইসলামের সাথে এবং সোনিয়া নারিল্যা গ্রামেই স্বামীর বাড়ীতে সংসারের ঘানী টানছে। গোপন সংবাদে তারা জানিয়েছে, লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও এই সমাজ তাদের লক্ষ্যকে সফল হতে দেয়নি। ফলে নিভৃতে চোখের জল ফেললেও করার কিছু নেই।
একইভাবে উপজেলার খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের জালশুকা পশ্চিম পাড়া গ্রামে আজিজুলের অষ্টম শ্রেনীতে পড়–য়া মেয়ে সুমাইয়া খাতুন এবং আড়িয়া ইউনিয়নের বারআন্জুল গ্রামের আতাউলের মেয়ে আজমিয়ারা (১৫) আমরুল ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের আবদুল মোসিনের মেয়ে নাইস (১২) কে প্রকাশ্যে দিবালোকে বাল্যবিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ননের গ্রামগ্রলোতে বাল্য বিয়ে চলে প্রকাশ্যে দিবালোকে।
স্থানীয়রা জানান, এমন কোন দিন নেই যে, বাল্য বিয়ে হচ্ছেনা। আর কারন হিসেবে জানিয়েছেন মোবাইল ফোনে বাল্যবিয়ের সংবাদ দিয়ে প্রতিকার চাইলেও কোন ব্যবস্থা নেননা কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। ফলে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় বাল্যবিয়ে চলছে অবাধে এবং বেপরোয়া ভাবে ।
সরকারী আইন ও বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে সমাজের কিছু অসাধু টাউটরা বাল্য বিয়ের দায়িত্ব নেন। তাদের কলকাঠিতে প্রতিকার নেয়া হয়না বাল্যবিয়ের। আবার অতি সম্প্রতি আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে যে, প্রকৃত জন্ম নিবন্ধন গোপন রেখে বয়স বেশী লিখে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন কার্ড তৈরী করে তা বিয়ের মজলিসে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ফলে বুঝার কোন উপায় থকেনা।
এসবের কারনে গত তিন মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক বাল্য বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাল্যবিয়ের প্রভাবে ১৮-২০ বছর বয়সেই অনেকেই হয়ে পড়েছেন তালাকপ্রাপ্তা নারী। এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা তো আছেই।
শাজাহানপুর উপজেলায় বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধ কমিটি থাকলেও তারা শুধু কাগজে কলমে। তাই বাল্যবিয়ের প্রতিকার প্রতিরোধ ও নারী সুরক্ষা আইন প্রয়োগ না থাকায় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতাকেই দুষছেন সমাজ সচেতনরা।
এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ ফয়ারা খাতুনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তবে রাতের আধারে অজো পাড়া গায়ে বাল্যবিয়ে দেয়া হলে সেসব সংবাদ পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে তখন করার কিছু থাকেনা।
বহুমাত্রিক.কম