
শেখ হাসিনা-ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নন, বিশ্বে নারী নেতৃত্বের বিকাশ এবং উন্নয়নের রূপকার হিসেবে তিনি সারাবিশ্বে নন্দিত। সেই সঙ্গে গর্বিত হয়ে বাংলাদেশের নামটি এখন বিশ্বের কাছে অনন্য উদাহরণে পরিণত হয়েছে। একজন নারী হয়েও দক্ষিণ এশিয়ায় তার নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সাফল্য এখন বহুল আলোচিত। শুধু বাংলাদেশ বা উপমহাদেশে নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বগুণে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছেন তিনি। এই অবস্থানে যেতে তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী নেতিবাচক চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা নিতে হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার ভূমিকা ও নেতৃত্ব এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা উদ্যোগ নিয়ে বিশ্বনেতারাও এখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নিজ ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশশ্রয় দিয়ে বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য তিনি পেয়েছেন ‘চ্যাম্পিয়ন অফ দা আর্থ’ পদক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী থেকে পেয়েছেন ‘ দেশিকোত্তম’ পদক। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’, ‘ক্যারিসমেটিক লিডার’, ‘প্রাচ্যের নতুন তারকা’, ‘বিশ্বের নেতা’, ‘বিশ্বশান্তির দূত’, ‘নারী অধিকারের স্তম্ভ’, ‘মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা’, ‘বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করেছে। এছাড়া কর্মদক্ষতা ও মহানুভবতার জন্যে শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে অসংখ্য পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন।
নারী জাগরণে এ ভূখন্ডে কাজ করে গেছেন অনেক মহীয়সী নারী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের নারী সমাজের বঞ্চনা, নির্যাতন, নিগ্রহ আর পিছিয়ে পড়ার ইতিহাসকে বদলে দিয়ে সম্ভাবনার নতুন ইতিহাস গড়ায় জাতিপুঞ্জ তার হাতে তুলে দিয়েছে নারী ক্ষমতায়নের স্বীকৃতি। নারী রাজনীতিবিদদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত ‘উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টারস’ নামক বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারকর্মী রিচার্ড ও ব্রিয়েনের লেখা এই বইয়ে প্রচ্ছদে বিশ্বের আরো ছয় নারী রাষ্ট্রনায়কের পাশাপাশি স্থান পেয়েছেন শেখ হাসিনা। বইটিতে রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহস, ঝুঁকি, প্রজ্ঞা এবং অবদানভিত্তিক সাজানো হয়েছে তার জীবনী। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ যেদিন আমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব, সেদিন গর্বিত বোধ করব।’ সত্যিই তিনি এই অঙ্গীকার নিয়েই দেশ পরিচালনা করছেন। ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত এবং সম্মানবোধ করছি। আমি বিশ্বব্যাপী নারীদের এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি; যারা ভাগ্য পরিবর্তনে নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন।’- ঠিক এমনি ভাবেই নিজের অর্জনের গর্বকে বাংলার উদার আকাশে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতিহাস আপন সুরে কথা বলে। মজার ব্যাপারটি হলো, যে আমেরিকা তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ দিয়েছিল, সেই দেশটিই নানামাত্রিক মূল্যায়নে ভূষিত করছে আজকের বাংলাদেশকে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। এই অর্জন বাংলার দেশ-জনতার। তবে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বে ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় রচনা করতে সক্ষম হয়েছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিন্দুকরা যাই বলুক না কেন-দুর্নীতি, অনিয়ম, অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদসহ শত প্রতিকূলতাকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উন্নত, ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এশিয়া গড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রশংসিত হয়েছে তিনি। নানা চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতে জর্জরিত বর্তমান বিশ্ব কাঠামোতে কীভাবে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে নিজের ভাবনাকে তিনি ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’সম্মেলনে তুলে ধরে বলেছেন- ‘মানবতা আর শুভ শক্তির জয় হবেই। বিশ্ব আজ অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, এই উদীয়মান এশিয়ার দিকে। উদ্ভাবনে, অনুপ্রেরণায় বিশ্বকে শান্তি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এশিয়াকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।’
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিকভাবেও নারীদের ক্ষমতায়ন করার কাজটি শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ৩০ শতাংশ কোটা সুনির্দিষ্ট করেন। শেখ হাসিনার হাত ধরেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মেয়েদেও খেলাধুলার ব্যবস্থা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নারী উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ উপনেতা, হুইপ-স্পিকার, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, কৃষিসহ সংস্থাপন, ডাক-টেলিযোগাযোগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বড় বড় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্বই শুধু নয়, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয়, সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর, এসএসএফ, সচিব পদসহ সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বহু প্রতিষ্ঠানের গুরুদায়িত্বে নারীদের আসীন কওে যে নারী ক্ষমতায়নের যে দ্বার উন্মোচন করেছেন, তা বাংলাদেশের পূর্ববর্তী কোনো সরকারই দাবি করতে পারবে না। সেই অনুপ্রেরণা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পেশায় নারীদের সাফল্যজনক অংশগ্রহণও বেড়েছে। দেশের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকতায় যুক্ত রয়েছে বহু নারী। খেলাধুলায় বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবল এমনকি উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়েও এগিয়ে এসেছে নারীরা। শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম সফলতা হলো বাংলাদেশের নারীরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও জায়গা করে নিয়েছে। পাশাপাশি নারী কূটনীতিক, বিমানের বৈমানিক, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের নারীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত থেকে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে এদেশের নারীরা সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জাতীয় উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে সমর্থ হচ্ছে এবং জাতি গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সৎ-সাহসী নেতৃত্বের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী মেরি ক্লড বিবেউ। তিনি বলেন, প্রথমত নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকার মেয়েদের শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, যা নারীর ক্ষমতায়নে খুবই ক্ষমতাশালী একটি উপাদান। বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকী বিশ্বের একশ ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের পাশে না দাঁড়াত তাহলে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুধু এশিয়ার রাজনীতিতে নয় বরং গোটা বিশ্বে পড়ত। শেখ হাসিনা নিজের দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা আর নেতৃত্ব দিয়ে এ যাত্রায় সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এখানেই তাঁর বিশাল নেতৃত্বের কৃতিত্ব।
বর্তমান বিশ্বে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেত্রী হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এশিয়ার চীন, হংকং, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের পাঁচজন রাজনৈতিক নারী নেত্রীর কর্মকা- তুলে ধরে স্বনামধন্য ও আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল ডিসকভারি ডিকোড ‘এশিয়ান পাইভ মোস্ট পাওয়ার ফুল উইমেন ইন পলিটিক্স’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করেছে এশিয়ার নারী নেত্রীদের মধ্যে শেখ হাসিনাকে তালিকার প্রথমেই স্থান দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ‘সমস্যার সমাধানদাতা’ বা ‘প্রবলেম-সলভার’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ইস্যুতে মানবিক অবদানের জন্য শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। জাপানভিত্তিক সংবাদপত্র নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ এক প্রতিবেদনে বলেছে, শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কঠোর কর্তৃত্ব দিয়ে নিজের দেশের বিরোধী পক্ষকে যেমন উড়িয়ে দিয়েছেন, তেমনি পূর্ব ও পশ্চিম উভয়বিশ্বে নিজের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে নিয়েছেন তিনি।
সামাজিক এবং মানব উন্নয়নের অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ বিশ্বের অনেক ব্যক্তি ও সংস্থা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন বারংবার। তাঁর সুদৃঢ় অবস্থানের ফলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত সমগ্র বিশ্বে সুস্পষ্টভাবে যে বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল তারই বাস্তব প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করছে বিশ্ববাসী। নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য এক বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই উন্নয়নের স্বপ্ন নতুন আশার বিস্তার করেছে দেশবাসীর মানসপটে। সামাজিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই আজ আমরা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেড়েছে শিক্ষার হার, কমেছে দারিদ্র্যের হার। বাংলাদেশ এখন খাদ্য সমৃদ্ধ দেশ। রিজার্ভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রবাসী আয় বর্ধিত। দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। আর্থসামাজিক সব ক্ষেত্রেই এগিয়েছে বাংলাদেশ। মানবসূচক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিস্মিত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা। পৃথিবীর রাষ্ট্র নায়কদের ইতিহাসে শেখ হাসিনা উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তাঁর হৃদয়ে দেশ ও মানবতার জন্য আত্মত্যাগের স্থান অবারিত। তিনি এখন বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক। উন্নত বাংলাদেশের রূপকার।
এস এম মুকুল: সাংবাদিক, কলামিস্ট, কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষক, [email protected]