
ফাইল ছবি
যশোর প্রধান ডাকঘরের নৈশপ্রহরী রবিউল ইসলাম (৩৫)এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ শহরের পোস্ট অফিস সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করলেও, নিহতের স্ত্রী ও পরিবারের দাবিএটি একটি পরিকল্পিত হত্যা।
নিহত রবিউল ইসলামের বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার ধুয়াইল গ্রামে। তিন মাস আগে বদলিজনিত কারণে তিনি যশোর প্রধান ডাকঘরে নৈশপ্রহরী হিসেবে যোগ দেন।
ডাকঘরের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল কার্যালয়ের সুপার মনিরুল আল নূর জানান,রবিউল নিয়মিতভাবে রাতের ডিউটি পালন করতেন। শনিবার রাতেও তিনি দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মস্থলে আসেন। সোমবার সকালে সহকর্মীরা ডাকঘরের পাশের নির্মাণাধীন ভবনের একটি কক্ষে তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান।
সহকর্মী দাউদ হোসেন ও জিয়াউর রহমান বলেন, সকালবেলা তাঁরা নির্মাণাধীন বিশ্রাম কক্ষে ঢুকে ফ্লোরে রবিউলের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর গলায় ব্যান্ডেজ কাপড়ের মতো একটি রশি প্যাঁচানো ছিল এবং ছাদের আড়ার সঙ্গে ব্যান্ডেজ কাপড় ঝুলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু ব্যান্ডেজ কাপড় ছিঁড়ে গিয়ে তিনি নিচে পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যান।
তবে রবিউলের পরিবার এই দাবিকে নাকচ করেছে।পরিবারের অভিযোগ এটি পরিকল্পিত হত্যা
নিহতের স্ত্রী রিমি আক্তার বলেন,আমার স্বামী আত্মহত্যা করতে পারে না। কেউ তাকে মেরে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে।’ তিনি জানান, রবিবার রাত ১১টার দিকে স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক বিষয়ে শেষবার কথা হয় তাঁর।
রিমির দাবি, মাগুরা এলাকায় সাজ্জাদ, নয়ন, আলামিনসহ ৫/৭ জনের কাছে তাঁর স্বামী লক্ষাধিক টাকা পাওনা ছিলেন। গত সপ্তাহে এ নিয়ে মাগুরায় একটি সালিশে নয়ন তাঁর স্বামীকে খুনের হুমকি দেন। এর ঠিক এক সপ্তাহ পর রবিউলের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, ‘হাজারো চাপের মাঝেও কখনও আত্মহত্যার কথা বলেননি রবিউল।’
নিহতের শ্যালক শামীম বলেন, আমার দুলাভাই যশোরে বদলি হয়ে আসেন মাত্র তিন মাস আগে। স্ত্রী-সন্তান মাগুরায় থাকে। মৃত্যুর কারণ বুঝে উঠতে পারছি না।’
নিহতের বড় ভাই ফরহাদ হোসেন বলেন,রবিবার রাতেই ফোনে রবিউল তাকে জানিয়েছিলেন, স্ত্রী-সন্তানদের দেখাশোনার জন্য কিছুদিন মাগুরায় থাকতে হবে। পরদিন সকালে মৃত্যুসংবাদ শুনে তিনি যশোরে আসেন। তাঁর অভিযোগ, ‘রবিউল আত্মহত্যা করার মতো মানুষ না। তাঁকে খুন করা হয়েছে।’
যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে পুলিশ মৃতদেহটি হাসপাতালে নিয়ে আসে। মৃত হিসেবে লাশ গ্রহণ করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত খান বলেন,‘রবিউলের মৃত্যুটি সন্দেহজনক। ঘটনাটি তদন্তে একাধিক টিম কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি আত্মহত্যা না হত্যা।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর ডাকঘর এলাকা অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে। মাদক সেবীসহ বিভিন্ন ধরনের লোকজন এখানে ভোর রাত পর্যন্ত অবস্থান করে। তাদের কারো সঙ্গে নৈশপ্রহরীর গোলযোগ হয়েছিল কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।