
ছবি: সংগৃহীত
প্যারিসের ঐতিহাসিক লুভ্যর জাদুঘর থেকে দিনের আলোয় সংঘটিত এক দুঃসাহসিক ডাকাতি নিয়ে তোলপাড় চলছে। ফ্রান্সের এক সরকারি প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, সেখান থেকে যে গয়না চুরি গেছে তার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
প্রসিকিউটর লর বেকো ফরাসি রেডিও স্টেশন আরটিএল’কে চুরি যাওয়া গয়নার মূল্য সম্পর্কে জানান, এই অঙ্ক অস্বাভাবিক হলেও আসল ক্ষতি হয়েছে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের। কারণ, চুরি যাওয়া গয়নাগুলোর মধ্যে ছিল ফরাসি রাজমুকুটের অংশ। এছাড়া ছিল দুই নেপোলিয়ন তাদের স্ত্রীদের যেসব মূল্যবান অলঙ্কার উপহার দিয়েছিলেন সেগুলোও। রবিবার সকালে জাদুঘর খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই শক্তিশালী ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চোরেরা পুরো কাজ শেষ করে ফেলে আট মিনিটেরও কম সময়ে। দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ সময়ের মধ্যেই গয়নাগুলো হয়তো দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। বেকো বলেন, গয়নার আনুমানিক মূল্য প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হলো যাতে চোরেরা গয়নাগুলো নষ্ট না করে বা গলিয়ে না ফেলে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি তাদের মনে খুব খারাপ ধারণা আসে গয়নাগুলো গলিয়ে ফেলার তাহলে তারা পুরো অর্থও পাবে না।
কী কী চুরি হয়েছে: চুরি যাওয়া গয়নাগুলোর মধ্যে আছে একটি হীরক ও পান্নার হার। সম্রাট নেপোলিয়ন তার স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলেন তা। আছে একটি টায়রা (মুকুট), যা সম্রাজ্ঞী ইউজেনি পরতেন। তিনি ছিলেন তৃতীয় নেপোলিয়ানের স্ত্রী। চুরি হয়েছে রানী মেরি-আমেলি’র মালিকানাধীন বেশ কিছু গয়না। তদন্তকারীরা চোরদের পালানোর পথে একটি ক্ষতিগ্রস্ত মুকুট উদ্ধার করেছেন, যা আগে ইউজেনির ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। চোরেরা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এটি ফেলে গেছে। চারজন নেকাবপরা চোর একটি যান্ত্রিক লিফটযুক্ত ট্রাক ব্যবহার করে লুভ্যরের গ্যালারি অব অ্যাপোলোঅংশে প্রবেশ করে, যা সেন নদীর কাছে অবস্থিত। তাদের মধ্যে দু’জন ব্যাটারি চালিত ডিস্ক কাটার দিয়ে প্রথম তলার কাচের জানালা কেটে ভেতরে ঢোকে। তারা নিরাপত্তাকর্মীদের হুমকি দেয় এবং কর্মীরা দ্রুত ভবন খালি করে দেয়। বাইরে তারা নিজেদের ট্রাকটিতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এক কর্মচারীর সাহসী হস্তক্ষেপে সেটা ব্যর্থ হয়। এরপর তাদেরকে স্কুটারে পালাতে দেখা যায়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ঘটনাটিকে ফ্রান্সের ঐতিহ্যের ওপর একটি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর পর থেকেই দেশের সব সাংস্কৃতিক স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
প্রাথমিক এক তদন্তে জানা গেছে, লুভ্যরের প্রতি তিনটি কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষে সিসিটিভি নেই এবং জাদুঘরের প্রধান অ্যালার্ম সিস্টেম ঘটনাকালে কাজই করেনি। ফরাসি আইনমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানাঁ বলেন, নিরাপত্তা প্রোটোকল ব্যর্থ হয়েছে এবং চোরদের ট্রাকসহ জাদুঘরের ভেতরে ঢুকে পড়া ফ্রান্সের জন্য ভীষণ লজ্জাজনক।
তদন্তকারীদের ধারণা, এটি কোনো অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক চোরচক্রের কাজ। তাদের পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত, সময়সীমা ছিল সংক্ষিপ্ত, আর কার্যক্রম অত্যন্ত সমন্বিত। শিল্পকর্ম পুনরুদ্ধার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চুরির পর এক-দুই দিনের মধ্যেই যদি এসব জিনিস উদ্ধার না হয়, তাহলে সেগুলো চিরতরে হারিয়ে যায় বলে ধরে নেয়া হয়। অন্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো এখন হয়তো গলিয়ে ধাতু ও রত্ন আলাদা করে পাচার করা হয়েছে এবং মূল দামের সামান্য অংশে বিক্রি করা হচ্ছে।