
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অসাবধানতার কারণে সাভারের আশুলিয়ায় জুনায়েদ আহম্মেদ ইমন (১৫) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ফুট ওভার ব্রীজ পার হতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে পুরো শরীর ঝলসে গেছে।
বর্তমানে ওই পরীক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন তার শরীরের ৯০ ভাগ ঝলসে গেছে। এদিকে, ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবী জানিয়ে এলাকাবাসির উদ্যোগে গণসাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে।
গতকার রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া নির্মাণাধীন ফুটওভার ব্রীজে এ ঘটনা ঘটে।
জুনায়েদ আহম্মেদ ইমন ঢাকার আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে। সে স্থানীয় অঞ্জনা মডেল হাইস্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
এলাকাবাসি জানান, নবীরগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাড়ইপাড়া বাস স্ট্যান্ডে একটি ফুটওভার ব্রীজ নির্মিত হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে। এরই মধ্যে ফুটওভারের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ফুটওভার ব্রীজের পশ্চিম ও পূর্ব উভয় পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে। ফুটওভার ব্রীজে উঠার পূর্ব পাশের সিড়ির উপর দিয়ে ৩৩হাজার বোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন নেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে ফুটওভার ব্রীজের পূর্বপাশের অংশ ছাউনি না দিয়েই কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া ব্রীজের উঠার উভয় পাশের সিরি উন্মুক্ত রেখেই চলে যায় ঠিকাদার ও তার মনোনিতরা। যার কারণে ঝুকি নিয়েই ওই ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করে পথচারীরা। রবিবার সন্ধ্যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী জুনায়েদ আহম্মেদ সুমন রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফুটওভার ব্রীজে উঠে। এসময় ব্রীজের উপর দিয়ে যাওয়া ৩৩হাজার বোল্টের বৈদ্যুতিক লাইনে স্পর্শ হলেই শরীরে আগুন ধরে যায় সুমনের। এসতময় তার পুরো শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চক্রবর্তী এলাকার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
জুনায়েদ আহম্মেদ ইমনের বাবা আব্দুল গফুর কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, চারটি মেয়ের পর আমার এই ছেলে সন্তান। সে বাচবে কিনা জানি না। এত বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটল ফুটওভার ব্রীজের উপর। অথচ কোন কর্তৃপক্ষ কিংবা ঠিকাদারের পক্ষ থেকে কেউ সান্তনা দিতেও আসেনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ফুটওভার ব্রীজের পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগেই তারা দুই পাশের সিড়ি খুলে রেখেছে। আবার পূর্ব পাশের দিকে বিদ্যুতের লাইন থাকায় সেখানে কাজ করেনি। এরপরও ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেছে ঠিকাদার। আমার ছেলের এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।
স্থানীয় বাড়ইপাড়া বাজার বণিক সমিতর সভাপতি সিকদার বেনজির আহামেদ জানান, পুরো কাজ শেষ না করেই ফুটওভার ব্রীজ অরক্ষিত অবস্থায় রেখেই ঠিকারদার ও তার লোকজন চলে যায়। দুই পাশেই সিড়ি খোলা থাকার কারণে আর উপর দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন যাওয়ার কারণে আজ একজন পরীক্ষার্থীকে এভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে। এ দূর্ঘটনার জন্য সড়ক ও জনপথ এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেই দায়ী করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (মানিকগঞ্জ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমি হোসেন মোঠোফোনে জানান, আমরা বিষটি শুনেছি। আসলে ব্রীজটি নির্মাণাধীন, ছেলেটি ব্রীজ দিয়ে যাওয়ার ফলে অসাবধানতাবশত এ দূর্ঘটনা ঘটে। ছেলেটির বিষয় নিয়ে আমরা অফিসে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। পরবর্তীতে ছেলেটির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
বহুমাত্রিক.কম