
-লেখক
স্কুল বা কলেজে ইতিহাস ঠিক সেভাবে পড়িনি, অর্থাৎ পড়ার বিষয় হিসেবে ছিলনা। তবে ইতিহাস নিয়ে আমার হাতেখড়ি কিন্তু আমার কলেজ লাইব্রেরিতেই হয়। পরবর্তীকালে ব্যাংকের চাকরীতে ঢোকার পর পোস্টিং হল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে, আমার ভাগ্য ভাল ছিল ভাড়াবাড়ি পেয়েছিলাম `স্টেট্ লাইব্রেরির` ঠিক পাশেই।
সুযোগের সদব্যবহার করেছিলাম ও শুরু হল ভারতের ইতিহাস, স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে পড়াশোনা, পরবর্তী সময়ে ইন্টারনেটর মদতে আরও তথ্য পেলাম। পরে যখন কলকাতার কাছে অর্থাৎ বাড়ির কাছে পোস্টিং পেলাম, আমার পড়াশোনা ও তার বিশ্লেষণ এর মাত্রা অবশ্যই বাড়লো, প্রযুক্তির ব্যবহারে, সামাজিক মাধ্যমের দ্বারা নিজের কাজ ও গবেষণা আরও অনেকের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করলাম। আরম্ভ করলাম কুইজ, ওয়েবিনার, বিশিষ্ট গবেষকদের সাথে আলোচনা ও ঐতিহাসিক বিষয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ।
খুব একটা বেশী এখনো জেনে উঠতে পারিনি তবে একজন ইতিহাস-অনুরাগী হিসেবে বলতেই পারি, সম্পূর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস যেমন গুরুত্ত্বপূর্ন, ঠিক তেমনই বৈচিত্রময়। আর তার মধ্যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা উচিৎ।
একজন ভারতীয় হওয়ার প্রেক্ষিতে বলছি, অত্যাচারী ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সারা ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে হওয়া বিদ্রোহ বা আন্দোলন গুলোর বিশ্লেষণ ও সঠিক প্রস্তুতি খুবই প্রয়োজন। প্রতিটি বাঙালির যেমন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বলতেই যে নামটি প্রথমেই মাথায় আসে, তিনি এক ও অদ্বিতীয়ম `নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু`, আমিও কোনো ভাবেই তার ব্যতিক্রম ছিলামনা। কিন্তু আমরা কি নেতাজীর অবদান সম্বন্ধে সত্যিই সচেতন ও অগ্রহী!
নাকি স্বাধীন ভারতে নেতাজীর জন্য শুধু থেকে গেল ২৩শে জানুয়ারির উজ্জাপন আর ২৪ তারিখ থেকেই শুরু হয় বাঙালির কর্মব্যস্ততার অসুখ। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজী ও তাঁর আজাদী সেনার প্রচেষ্টার বলেই আজ উপমহাদেশ ব্রিটিশ মুক্ত, এটা প্রমাণিত। স্বয়ং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড ক্লিমেন্ট এটলি সেকথা ১৯৫৬ এ কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল জাস্টিস ফণিভূষণ চক্রবর্তীর সাথে আলোচনায় ব্যাক্ত করেছিলেন এবং পরে ব্রিটিশ `ডিক্লাসিফায়েড` নথিপত্রেও সেটাই প্রমাণিত।
আমাদের বোঝা উচিৎ, ইতিহাসের টেক্সট বই গুলোতে শুধু উল্লেখ করলে কোনো বিষয়ে দোষ ছাড়ানো যায় কিন্তু দেশের নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাসের বিষয়ে অবগত করানো যায়না। ১৯৪৭ এ ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা শুধু মাত্র অহিংস আন্দোলনের দ্বারা আসেনি, `ডিক্লাসিফায়েড` ব্রিটিশ নথিপত্র গুলোই যথেষ্ট তা বোঝার জন্য। নেতাজী ও তাঁর আজাদী সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত হলেও, নেতাজীর সৈন্য অভিযানের কারণেই ব্রিটিশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। আজ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, কিন্তু উপমহাদেশের এই মুক্তিদাতাকে কি আমরা যথাযথ মান দিতে পেরেছি!!
লেখক: পরিচালক (সম্মানিক), নেতাজী সুভাষ আইএনএ ইনফরমেশন সেন্টার, কলকাতা ও তথ্যচিত্র নির্মাতা।
বহুমাত্রিক.কম