Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বসন্তের রঙে ভালোবাসা দিবস

মোঃ আরিফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রিন্ট:

বসন্তের রঙে ভালোবাসা দিবস

‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’- কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতাটি যেন বসন্তের সূচনা বার্তা৷ আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন বনান্তে কাননে কাননে রঙিন কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। এ সময়েই শীতের জীর্ণতা দূরীভূত হয়ে সেজে উঠবে প্রকৃতি। প্রকৃতির এই পরিবর্তন জানান দেয় নতুন কিছুর। এ যে ঋতুরাজ বসন্ত।

বসন্তের আগমনী বার্তায় এ বছর যোগ হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বাঙালীরা এ বছর একই দিনে ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের সাক্ষী হতে চলেছে। ঋতুরাজ বসন্ত বরণের দিনটি নির্ধারণ থাকলেও ভালোবাসার জন্য লাগে না কোন দিবস। তবে প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের প্রেম কাহিনীকে অবলম্বন করে দিনটি পালন করা হয়। ভালোবাসা শব্দটি নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নিকট সীমাবদ্ধ নয়। বরং ভালোবাসা রয়েছে সবার মধ্যে। এটি জগৎ জুড়ে এক মায়ার বন্ধন। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিক-প্রেমিকা সবাই ভালবাসার অংশ।

ভালবাসা দিবসটির পেছনেও রয়েছে কিছু ঘটনা কিছু ইতিহাস। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করত। কারো করোমতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। আবার কেউ বলেন, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোনও যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে তবে যুদ্ধ করবে কারা?

সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এযুবকের প্রতিবাদে খেপে উঠেছিলেন সম্রাট।রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই এ দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে। তবে এটিও সর্বজন স্বীকৃত নয়। এখানেও দ্বিমত আছে।

কারও কারও মতে, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি রোগীদের প্রতি ছিলেন ভীষণ সদয়। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেঁতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো। একদিন রোমের এক কারা প্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়।

ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বা কারও মতে ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারা প্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ (‘From your Valentine’)।

মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দু’চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এই দিনটিকে মানুষেরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করে আসছে। কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য? এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দু গুনের ছোট্ট জবার, ‘ভালোবাসা’ একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়, সারাবছর সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেঁছে নিয়েছে।

বসন্তের আগমনী বার্তা মানুষের মনে এক রঙের ছোঁয়া। প্রকৃতির নতুনত্বের সাথে নিজেকেও নতুনভাবে মেলে ধরতে চায় অনেকে। স্বপ্ন, ইচ্ছাকে নতুনরূপে সাজানোই যেন মনের বাসনা। বসন্তের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে। ১৪ই ফেব্রুয়ারী তাই বসন্তের রঙে ভালোবাসা যেন রঙিন হয়ে উঠে। বাসন্তি রঙে সাজে মানুষের মন। প্রকৃতির সুবাসের ন্যায় ভালোবাসার সুবাসও ছড়িয়ে পড়ে পরতে পরতে। প্রকৃতি ও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত আজকের ১৪ই ফেব্রুয়ারির দিনটি। একদিকে বাহ্যিক রঙিনতা মানুষের মাঝে ছড়ায় নানা ভাবে অন্যদিকে মনের রঙিনতা ছড়ায় ভালোবাসার টানে।

এই ভালোবাসা দিবসের জন্য অপেক্ষা নেহাত কম মানুষের নয়। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটিকেই বেছে নেয় অসংখ্য যুগল। তাদের অসংখ্য মনের কথা যে প্রকাশ করতে হবে এ দিনেই। ভালোবাসা দিবসে কেউ ছোটে প্রিয়জনের কাছে কেউবা আপনজনের কাছে। কেউ ছুটে যায় ছিন্নমূল শিশুদের কাছে। এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে থাকে অনেক পরিকল্পনা, আমেজ, সাজসজ্জা অপরদিকে অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিকট এ দিবস যেন অন্যান্য দিনের মতোই। তবে তাদের প্রিয়জন আপনজনের নিকট থাকে না ভালোবাসার কমতি।

একদিকে বসন্ত যেমন প্রকৃতিকে নতুনরূপে সাজায় তেমনি মনের বসন্তকে নতুন রূপ দেয় ভালোবাসা নামক দিবসটি। তারুণ্যের মনে জোয়ার আনুক বসন্তের অগ্রযাত্রা। ভালোবাসা বিস্তার করুক প্রতিটি মানুষের মনে। ভালোবাসার পবিত্রতা যেন রক্ষিত থেকে মানুষের মনবাসনা পূর্ণতা পায়। প্রকৃত ভালোবাসা আর প্রকৃতির ভালোবাসায় তরুণরা উজ্জীবিত হোক। এবছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি বসন্তের বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের যৌথ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক। বসন্তের রঙে হয়ে উঠুক জীবন ভালোবাসাময়। বসন্তের মতো জীবনের পথচলা হোম রঙিন। সকলকে বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা রইলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer