Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তিত নামে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ও নির্মোহ মূল্যায়ন

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ১৮ মে ২০১৮

আপডেট: ১৭:৪৬, ১৮ মে ২০১৮

প্রিন্ট:

মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তিত নামে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ও নির্মোহ মূল্যায়ন

-ড. মো. হুমায়ুন কবীর। ছবি : বহুমাত্রিক.কম

জলবায়ু পরিবর্তন এখন বৈশ্বিক একটি সমস্যাযুক্ত বিষয়। বর্তমান সময়ে পরিবেশের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি একাকার হয়ে গিয়েছে। সেজন্য এর বাস্তবায়নকারী সরকারের সংস্থা হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি সংযুক্ত করা সময়ের দাবী ছিল। আমরা জানি, সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ নিজেই একটি পরিবেশবান্ধব দেশ।

সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনই এর সর্বশেষ উদাহরণ। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই যেখানে পরিবেশবান্ধব এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পরিবেশের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন- তিনি এমন সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাইতো স্বাভাবিক। সম্প্রতি এমনই একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পন্ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

তিনি বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় বেশ কিছুদিন পূর্বে সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়র হোসেন মঞ্জু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও বর্তমানে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং পরিকলপনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সমন্বয়ে জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ বৈঠকে ইতিপূর্বে বর্তমান ‘বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা কিছু আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোন লাভ করেছে সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে।

কাজের সুবিধার্থে ও জনস্বার্থে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। দেশের অর্থনীতির আয়তন বাড়ার সাথে সাথে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য বাড়তি সেবা প্রদান বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি ব্রত। সেটার জন্য গত কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে ভেঙ্গে তাদের কাজের গতিশীলতার জন্য বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে কাজ ও দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙ্গে দুটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভেঙ্গে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ গঠন করা হয়েছে।

তার আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙ্গে রেল এবং সেতু ও সড়ক যোগাযোগের জন্য করা হয়েছিল আলাদা মন্ত্রনালয়। অপরদিকে এ জনবান্ধব সরকারের আমলেই কিছুদিন আগে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নাম যুগোপযোগী করার অংশ হিসেবে সেটাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন খুবই যুক্তিযুক্ত এবং সময়োপযোগী।

তবে অন্যসব নাম পরিবর্তনের সাথে এ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। কারণ এ নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃতিক দুর্যোগকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি এখন কোন একটি নির্দিষ্ট দেশের সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আগেই বলেছি এটি বৈশ্বিক একটি বিষয় যার মর্ম বাংলাদেশ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছে। আর সেজন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে সর্বদা সোচ্চার এবং অগ্রগামী নেতৃত্বের ভুমিকায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এবং সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও সারা দুনিয়া চষে বেড়িয়েছেন এবং বর্তমানে ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদও সেই চেষ্টাই করে চলেছেন। যেখানেই সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আহবান জানিয়ে একাত্ব হচ্ছেন।

আমরা জানি জলবায়ু নিয়ে বর্তমান বিশ্বে চলছে একপ্রকার আলোচনা সমালোচনা। জলবায়ুর সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো দৈনন্দিন জলবায়ু পরিবর্তন। আমাদের ছোট ছোট ও অনুন্নত, উন্নয়নশীল দেশসমূহ এসব বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিলেও উন্নত দেশসমূহ, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশি দায়ী তারা এসব বিষয়কে পাত্তা দিচ্ছে না। জলবায়ুর প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের বেরিয়ে আসাকে আতঙ্কের সাথেই দেখতে হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটি জাতিসংঘের কাছে জলবায়ুর প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে। অথচ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় অংকের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল।

ঠিক এমনি একটি সময়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্ত শব্দটি সংযোজন শুধু আক্ষরিক অর্থে নয় আগামী দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ পরিবেশের সাথে যেমন বনের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, ঠিক তেমনি বন ও পরিবেশ- এ দুটি শব্দের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনও খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে সম্পর্কিত।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের বিদেশের সাথে পরিবেশ ও জলবায়ুর সম্পর্ক স্থাপনে যৌথ প্রকল্প স্থাপনে সহায়ক হবে। সেইসাথে এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডেলে নিজেদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভূমিকা রাখবে বলেই সংশ্লিষ্ট সকলের বিশ্বাস। কারণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব নেতৃত্বের ভূমিকায়।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer