Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিষ প্রয়োগে নিধন : হুমকিতে সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:২০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বিষ প্রয়োগে নিধন : হুমকিতে সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

খুলনা : বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার এখন হুমকির সম্মুখীন। আমিষের চাহিদা পূরণের অফুরন্ত এই ভান্ডারের রক্ষনাবেক্ষণ এখন সময়ের দাবি।

পর্যাপ্ত সাপোর্ট, জলযানের অভাব, সোর্স মানি ও ঝুঁকি ভাতা না থাকায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ও অভয়ারণ্যে কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার কোনভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না। মাছ ধরার এই সর্বনাশা প্রক্রিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসলেও লোকবলের অভাব ও বনবিভাগের উদাসীনতার কারণে এ অপরাধ দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ বিষপ্রয়োগে মারা হচ্ছে। এতে শত শত মাছের প্রজাতি ধ্বংসের পাশাপাশি মৎস্য প্রজনন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অভ্যন্তরীন মৎস্য ভান্ডার শুন্য হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। আর আমরা খাচ্ছি বিষাক্ত খাবার অনুপযোগী মাছ।

সূত্রমতে, ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সুন্দরবনের স্থলভাগের পরিমান ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জলভাগের পরিমানে ২ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার । সুন্দরবন বন বিভাগ পূর্ব ও পশ্চিম এ দুভাগে বিভক্ত। দু বিভাগে মোট ৪টি রেঞ্জ রয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে ৪ শতাধিক খাল রয়েছে। এসকল খাল নদী পরিদর্শন করার জন্য ৭৬টি ক্যাম্প ও মাত্র ১৭৮ জন বন প্রহরী আছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম।

সুন্দরবন রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সরাঞ্জামাদি নেই। এর মধ্যে বেশকিছু নদী ও খাল অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে প্রজননের কারণে মাছ ধরা সম্পূর্ন নিষেধ। কিন্তু অসাধু মৎস্য শিকারীরা সুন্দরবনে বিভিন্ন খাল ও নদ নদীতে বিষ প্রয়োগ করে অবাধে নানা প্রজাতির মাছ শিকারের নামে সর্বনাশা কারবার চালাচ্ছে।

এতে করে একদিকে যেমন বনের গহীনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে বিষ প্রয়োগ করে শিকার করা মাছ খেয়ে জনসাধারণ পেটের পীড়াসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিষ প্রয়োগকৃত পানি পান করে বাঘ, হরিণসহ বনের নানা প্রাণিও বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বন বিভাগ মাঝে মধ্যে এসব মৎস্য দস্যুদের আটক করলেও বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার কোন ভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগে কয়েকবছর ধরে চলছে সর্বনাশা এই মাছ শিকার। এর সাথে এক শ্রেনীর মাঠ পর্যায়ের অসাধু বনকর্মচারী ও বনদস্যু বাহিনীগুলো সাপ্তাহিক চুক্তি ভিত্তিক উৎকোচ গ্রহন করে এই কর্মকান্ডের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। প্রতিবছর পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগ থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ বিষ দিয়ে মারা হয়। সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষেরা জানায়, একটি চক্র বেশ কয়েকটি গ্রুপ তৈরী করে তাদেরকে লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরায়। এই সিন্ডিকেটটি কয়েক বছর যাবৎ কতিপয় অসাধু বনকর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের ম্যানেজ করে এই ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ কারবারের সাথে মাছের আড়ৎদার, দাদনদাতা ও এক শ্রেনীর কিটনাশক বিক্রেতার পাশাপাশি বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সদস্যদের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন বিভিন্ন মহল। সুন্দরবনে বন্য প্রাণি ও মৎস্য সম্পদের অফুরান্ত ভান্ডার থাকার পরও এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবল অনেক কম। সুন্দরবনের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ যদি মৎস্য ও পাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে থাকত তাহলে বিশাল কর্মকর্তা কর্মচারী সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় কাজ করতে পারত।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির খুলনার সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্ধে অভিযান জোরদার করতে হবে। আমাদেরকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থে দেশের এই শত্রুদের বিরুদ্ধে বন বিভাগকে আরো কঠোর হতে হবে।

তিনি বলেন, সুন্দরবন, সুন্দরবনের প্রাণি ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, সুন্দরবনের সকল সম্পদ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে। বিপুল পরিমাণ প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ থাকার পরও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

তিনি সুন্দরবনের নদী খাল থেকে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এসকল দুস্কৃতিকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তাগিদ দেয়া হবে।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer