Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিশেষ এলাকার জীবনাচার নিয়ে অনবদ্য সৃষ্টি ‘নরসুন্দার বাঁকে’

আল্ জাবির

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ২ মার্চ ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বিশেষ এলাকার জীবনাচার নিয়ে অনবদ্য সৃষ্টি ‘নরসুন্দার বাঁকে’

একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস ‘নরসুন্দার বাঁকে’। উপন্যাসটির কাহিনি যেভাবে আবর্তিত হয়েছে সেখানে দেখানো হয়েছে, নরসুন্দা একটি ছোট্ট কিন্তু পুরাতন নদী। সেই নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে চলেছে ছায়া সুনিবিড় একটি গ্রাম। সেই গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া এক মেধাবী ভাবুক প্রকৃতির ছেলের নাম মনজু। মনজু তার গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করে মাধ্যমিকে ভাল ফলাফলের পর জেলা শহরের একটি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। তবে গ্রামে পড়ার সময় পারিবারিক সকল কৃষি কাজ করা, গ্রামের অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে মিশে দুরন্তপনায় খেলা করা এবং সিনেমা দেখা ইত্যাদি ছিল তার স্বভাবজাত।

গৃহস্থালী কাজ করার সময় সদ্য সমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের লোমহর্ষক কাহিনী শুনে তার মনে অনেক দাগ কাটে। তখন থেকেই তার মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঢুকে গিয়েছিল। পরে জেলা শহওে তার কলেজের পাশ দিয়েই আবার বয়ে চলে গেছে নিজ গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা সেই নদী নরসুন্দা। কলেজে পড়ার সময় সেখানে বন্ধুদের সাথে ভাব হওয়া, তারপর শখের বশে টিউশনি করাতে থাকে মনজু। এসএসসি পরীক্ষীার্থী এক ছাত্রীকে পড়ানোর সময় মনের অজন্তেই তার প্রেমে পড়ে যায় মনজু। সেই মেয়েটির নাম পাপড়ি। মনজু এইচএসসি পাশ করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে শেষপর্যন্ত তার পরিবারের আদিম পেশার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

সেখানে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশালত্বও তার মনের ভিতর থেকে পাপড়ির ভালোবাসা থেকে নিভৃত করতে পারেনি। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর স্রোতধারা তার মনের ভিতর বারবার নরসুন্দার বাঁকের সেই পাপড়ির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পাপড়ির প্রতি তার প্রবল ভালোবাসর টানে সে একদিন সেই নরসুন্দা নদীর পাড়ের সেই জেলা শহরে গিয়ে দেখে পাপড়ি তার পরিবারসহ অন্যত্র চলে গেছে। তখন মনজুর মনে অসীম বিরহ কাতর এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এভাবেই উপন্যাসের বিয়োগাত্মক কাহিনীর সমাপ্তি ঘটেছে।

ভাষার মাস ও ফেব্রুয়ারি বইমেলার শেষদিন অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ লেখকের কর্মস্থল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম, কোষধ্যক্ষ অধ্যাপক এএমএম শামসুর রহমান এবং সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি, শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে উপন্যাসটির মোড়ক উম্মোচন করেন।

উপন্যাসটির লেখক ড. মো. হুমায়ুন কবীরের জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০ সালে, পিতা- মৃত হেকমত আলী, মাতা-মিসেস শামসুন্নাহার এবং নরসুন্দা নদীর তীরে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম-চরটেকী, ডাকঘর-তারাকান্দি, উপজেলা-পাকুন্দিয়া, জেলা-কিশোরগঞ্জ। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালস্থ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি একই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪ বছর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বপালন করেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও পাকুন্দিয়া ডিগ্রী কলেজ হতে এইচএসসি উভয়টিতে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিজ্ঞানের উপর উচ্চতর বিএসসিএজি, এমএস (কৃষিতত্ব) ও পিএইচডি (কৃষিতত্ব) ডিগ্রী অর্জন করেন। ড. মো. হুমায়ুন কবীর মূলত পরিবেশ ও কৃষিবিষয়ক গবেষক, প্রবন্ধকার ও কলাম লেখক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তাঁর পত্র-পত্রিকায় লেখার অভ্যাস। ময়মনসিংহে ‘দৈনিক জাহান’ পত্রিকা দিয়ে শুরু। তারপর চাকুরিকালীন সময়ে বিভিন্ন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও দৈনিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় কলামে কৃষি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনীতি, বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা, রাজনৈতিক এবং শিক্ষামূলক সাম্প্রতিক ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিয়মিত কলাম লিখছেন। এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় চার শতাধিক আর্টিকেল বিভিন্ন পত্রিকায় এবং প্রায় অর্ধশতাধিক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মূলত একজন প্রবন্ধকার হলেও ভ্রমণ কাহিনীও লিখছেন।

কৃষি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখকের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাক্ষিক কৃষি প্রযুক্তি পত্রিকা ‘লেখক সম্মাননা-২০১৫’ পেয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থ দুটি- ‘কৃষি ও পরিবেশ: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু থেকে দেশরত্ন’ ইতোমধ্যে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। পাঠক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, গুরুজন, শুভানুধ্যায়ীবৃন্দের পরামর্শে সিরিয়াস এবং সাহিত্যের মূলধারার কাজ হিসেবে ‘নরসুন্দার বাঁকে’ তাঁর প্রথম উপন্যাস। অন্যান্য লেখাগুলোর মতো তাঁর উপন্যাসেরও সাফল্য কামনা করি।

লেখক : সহকারি অধ্যাপক, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer