Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাউল সম্রাটের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানমালা শুরু হচ্ছে রোববার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:২২, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০০:২৮, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

প্রিন্ট:

বাউল সম্রাটের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানমালা শুরু হচ্ছে রোববার

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

কুষ্টিয়া : পহেলা কার্তিক, রোববার থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপি বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন শাহের ১২৬ তম তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) দিবসের অনুষ্ঠানমালা ও লালন মেলা।

এ উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির বারাম খানার আখড়া বাড়ীতে বসছে সাধূর হাট। আখড়াবাড়ি পরিণত হয়েছে সাধূ-গুরু-বাউলদের মিলনমেলা।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে তিরোধান দিবস পালন উপলক্ষ্যে আখড়াবাড়িতে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ‘পারে লয়ে যাও আমায়’ এ স্লোগানে ও সত্য সুপথের সন্ধানে মানবতার দিক্ষা নিতে ইতোমধ্যেই আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তরা দলে দলে এসে আসন গেড়েছে সাঁইজির মাজারে।

প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী প্রতিবার তিনদিনের এ উৎসব পালিত হলেও মাঝে বেশ কয়েকবছর ধরে তা বাড়িয়ে পাঁচদিনের প্রথা চালু করা হয়েছিলো। আবার তা ফিরিয়ে এনে আবার ৩দিনে করা হয়েছে।

আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হোক আমাদের দিন বদলের অনুপ্রেরণা-এই প্রতিপাদ্য শে¬াগানকে বাস্তবায়িত করতে বাউল সম্রাটের ১২৬তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানমালাকে সাজানো হয়েছে ৩ দিনব্যাপি।

মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৫/৬ দিন আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছে সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে।

রোববার থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপি বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন শাহের ১২৬তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চলবে। আখড়াবাড়িতে মঞ্চ ও লালন মেলার স্টল নির্মাণ ও মাজার ধোয়া মোছার কাজ শেষ করা হয়েছে কয়েকদিন আগে।

৩ দিনব্যাপি বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবসের (মৃত্যুবার্ষিকী) অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, পিপি এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, জিপি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মাসুম, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুন, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান।

মুখ্য আলোচক হিসেবে থাকছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। আলোচক থাকছেন লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তার।

স্বাগত বক্তব্য রাখবেন লালন একাডেমির সদস্য সচিব আতিকুল্লাহ মামুন। সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে র‌্যাব ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে তিনদিনের এই অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে এবং লাখে লাখো মানুষের আগমন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এবং মাজারের চারিপাশ ঘুরে ঘুরে দেখেন।

জেলা প্রশাসক জানান, তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান।

আর্থিক অসংগতির কারনে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে।

পরে মলম শাহ’র আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন। ভক্ত মলম শাহের দানকৃতষোল বিঘা জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন।

তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৬ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়।

আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে লালন সঙ্গীত। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পীরা।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer