Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন-হুমকিতে বিস্তীর্ণ জনপদ

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:১৫, ২২ মে ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন-হুমকিতে বিস্তীর্ণ জনপদ

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) ঘুরে এসে : জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ইউ আকৃতির আঁকাবাঁকা খরস্রোতা ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের অব্যাহত ভাঙ্গনে গত এক যুগে শতাধিক বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের ফলে ধলাই তীরবর্তী চাইয়াখালি হাওরের দেড়শ’ একর ফসলি জমি, হীরামতি, চৈতন্যগঞ্জসহ নদী তীরবর্তী গ্রামসমুহ হুমকির মুখে পড়েছে।

ভারত থেকে আসা এই নদীর একাধিক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রয়েছে। অল্প বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে দেখা দেয় নদী ভাঙ্গন। চলতি মৌসুমে অকাল বন্যায় তিন দফা পানিতে নিমজ্জিত হয় উপজেলার নিন্মাঞ্চল। পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষীরা পৃথক পৃথকভাবে ধলাই ও লাঘাটা নদীর বাঁধ মেরামত, খনন ও সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে ইউএনও’র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়ন লাল ফিতায় বন্ধি বলে ভাঙ্গন আক্রান্ত গ্রামবাসীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন।

উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি, শুকুরউল্লা গাঁও, ধলাইপার, সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, পৌর এলাকার কুমড়াকাপন, রামপাশাসহ নদী তীরবর্তী গ্রামের একাধিক স্থানে ধলাই বাঁধে ফাটল ও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে আর উজানে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীটি ফুৃলে উঠার সাথে সাথে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়। গত কয়েক বছরে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের অব্যাহত ভাঙ্গনে অনেক বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গ্রামের চৈতন্যগঞ্জ ও হীরামতি গ্রামের আয়তনও অনেকটা ছোট হয়ে গেছে।

সরেজমিন চৈতন্যগঞ্জ ও হীরামতি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নদীর তীরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রয়েছে বাড়িঘর। পাহাড়ি ঢলের স্রোতে যেকোন সময় এসব বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন বাসিন্দারা। হীরামতি গ্রামে একাধিক ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন কুমার দাশের পাকা বাড়ির বসত ঘর ও পাশের সুরুজ মিয়ার কাঁচা ঘরটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়।

গ্রামবাসীরা জানান, গত এক যুগে চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের ইসহাক মিয়া, আত্তর উল্যা, হুরমত মিয়া, জব্বার উল্যা, নজির মিয়া, বাদশাহ মিয়া, মতলিব মিয়া, মাহমুদ আলী, রবিদাশ সম্প্রদায়ের ধরম রাজ রবিদাস, বিজয় রবিদাস, বাদল রবিদাস, অর্জুনা রবিদাস, সগুয়া রবিদাস, জালিম রবিদাস, বলরাম রবিদাস, মিঠাই লাল রবিদাস, কান্ত রবিদাস, আন্ত রবিদাস, জাদারিয়া রবিদাস ও রামচরণ রবিদাসসহ গ্রামের ৫০টি ঘর ধলাই নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। বসতঘর নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় তারা এ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। এ গ্রামের মুন্সীবাজার ভায়া চৈতন্যগঞ্জ সাংসদ আব্দুস শহীদ মৈত্রী সেতু এলাকা থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে বড় ধরনের ভাঙ্গন চলতে দেখা গেছে।

মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন দাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে চাকুরী করে প্রায় ১০/১২ বছর আগে দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। বাঁধের অব্যাহত ভাঙ্গনে তার বাড়ির তিনটি কক্ষ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে এখন অবশিষ্ট দুটি কক্ষ নিয়ে ঘরের বাকি অংশ ভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছে। ভাঙ্গা অবস্থায় ঘরের ঢালাইর একটি অংশ নদীর দিকে ঝুলে আছে। নদীতে পানি বাড়তে থাকলে সব সময় আতঙ্কে তিনি থাকেন যে কখন বাকি অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

গ্রামবাসীরা বলেন, কয়েক বছর ধরে চৈতন্যগঞ্জ গ্রাম এলাকায় ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত করার জন্য স্থানীয় সাংসদ উপাধ্যক্ষ এম এ শহীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কমলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেও কোন সাড়া পাননি।

নিরঞ্জন কুমার দাশ বলেন, ২০১৩ সনের ২৫ ফেব্রুয়ারি ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গনের হাত থেকে বসতবাড়ি ও চাইয়াখালি হাওরের প্রায় দেড়’শ একর জমি রক্ষার দাবি জানিয়ে মৌলভীবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেন। পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেন। বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও চৈতন্যগঞ্জ গ্রাম এলাকার ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়নে কোন কাজ হয়নি। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতা বলেও গ্রামবাসীরা মনে করেন।

এদিকে নদী ভাঙ্গনে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান, দুরুদ আলী ও পতনঊষার ইউনিয়নের তোয়াবুর রহমান বলেন, তিনদফা বন্যায় নিন্মাঞ্চল কৃষকদের বোরো ও সবজিক্ষেত পুরোদমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ধলাই ও লাঘাটা নদীর বাঁধ মেরামত, খনন ও সংস্কারসহ কয়েকটি দাবিতে দলবদ্ধ কৃষকদের সাথে ইউএনও’র মাধ্যমে পৃথক পৃথক দুটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন সাড়া না পাওয়ায় তারা পরবর্তী আউস চাষাবাদ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দু বিজয় শঙ্কর জানান, আপাতত কমলগঞ্জ পৌরসভার গোপালনগর গ্রামের ভাঙ্গন এলাকায় পাথরের ব্লক স্থাপন করা হবে। আর চৈতন্যগঞ্জ গ্রামসহ পুরো কমলগঞ্জ উপজেলাধীন ধলাই তিরক্ষা বাঁধ উন্নয়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরু হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer