Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ডিজিটাল মানে আত্মবিশ্বাসী হওয়া : নসরুল হামিদ

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ডিজিটাল মানে আত্মবিশ্বাসী হওয়া : নসরুল হামিদ

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

ঢাকা : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ডিজটাল মানে কেবল মোবাইল ফোন-ইন্টানেট নয়। ডিজিটাল মানে আত্মবিশ্বাসী হওয়া। পুরো উন্নয়ন প্রচেষ্টায় এই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগানো গেলে প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 

চায়না দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। এতে প্রযুক্তি ও উপকরণগত সহায়তা দিচ্ছে চায়না প্রতিষ্ঠান আইসফস্টোন।

‘অগ্রবর্তী পরিকল্পনা’য় গুরুত্বারোপ করে নসরুল হামিদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে আমূল বদলে দিবে। ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পটি তেমনি এক প্রকল্প যা দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে অধিকতর উন্নত করবে।’

কৃষিতে প্রভূত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই খাতে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির বহুমূখি ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীর গ্রাম হবে প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত গ্রাম। যেহেতু আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর, সেহেতু কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধমেই সর্বোচ্চ উন্নতি সম্ভব। আমরা ই-ভিলেজ প্রোগ্রামের মাধ্যমেই গ্রামীণ অর্থনীতির সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করব।’

কৃষিতে নতুন বিপ্লব আনবে ‘ই-ভিলেজ’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিবিদ আবদুল মান্নান এমপি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়। একসময়ের খাদ্য ঘাটতির এই দেশ এখন খাদ্য রপ্তানির বাজার অনুসন্ধান করছে। তবে কৃষির বর্তমান এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। একই সাথে বাণিজ্যিক কৃষিতেও যেতে হবে আমাদের।’

সেক্ষেত্র্যে ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

বিশেষ অতিথি আইসফস্টোন-এর মহাব্যবস্থাপক ফেরহক ওয়াল্টার বলেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ই-ভিলেজ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং আধুনিক রূপান্তর সম্ভব। কৃষি অর্থনীতির গতানুগতিক হিসাবনিকাশ পাল্টে দিতে পারে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চাষাবাদ ও বিপণন প্রক্রিয়া।’

 

‘ই-ভিলেজ’র প্রজেক্ট ইনভেস্টিগেটর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রশীদুল হাসান প্রকল্পের বিষয়ে বলেন, সাম্প্রতিক বিশ্বে স্মার্ট এগ্রিকালচার মডেল অনুসরণে ‘ই-ভিলেজ’ নামের এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে একটি গ্রামে বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তীতে এটিকে বৃহত্তর পরিসরে কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্পের শুরুতে একটি আদর্শ কৃষি প্রধান গ্রাম বেছে নেওয়া হবে। বলে রাখা দরকার, কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তির নানামূখি ব্যবহার বাংলাদেশে এক দশকেরও আগে শুরু হয়। তখন থেকে বিভিন্ন কৃষক সহায়ক অ্যাপসের মাধ্যমে টেলিসেন্টার বা ডিজিটাল সেন্টার থেকে কৃষকদের পরিসেবা দেওয়া হচ্ছে। জোর দিয়েই বলা যায়, দেশজুড়ে ডিজিটাল সেন্টারগুলো কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারকে অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও এসব অ্যাপস এর পরিসেবার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে-অনেক সময় এগুলো রিয়েলটাইম হয় না।

‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পটি অতীতের সেসব সীমাবদ্ধতাকে জয় করে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি স্মার্ট অ্যাপস তৈরী করা হবে। যা বাংলায় সহজে কৃষকের ব্যবহার উপযোগী, ছবি ও অডিও ভয়েসযুক্ত করা হবে। যার মাধ্যমে কৃষকরা তার জমির ও ফসলের কী অবস্থা তা জানতে পারবে। প্রকল্পের শুরুতে এটি সবজি ক্ষেতে সমীক্ষা চালানো হবে। ধীরে ধীরে তা অন্য ফসলে নিয়ে যাওয় হবে।

কৃষকরা সকালে ফোন সেটটি ওপেন করলেই তাতে একটি বার্তা যাবে, যাতে নির্দেশনা থাকবে-তাঁর ক্ষেতের সবশেষ কী অবস্থা। একই সাথে করণীয়গুলোও জানিয়ে দেবে-কী ধরণের ওষুধ, সার পানি বা অন্যান্য উপকরণ দিতে হবে। যদি তারা বাড়ির বাইরেও থাকে যাতে তার কাছে বার্তা যায় সে ব্যবস্থা থাকবে। কৃষকরা তাদের ক্ষেতের জটিল কোনো অবস্থাতে কারও কাছে দারস্থ না হয়ে নিজেই সমাধান করতে পারবেন।

স্থানীয় আবহাওয়া ও অন্যান্য উপযোগীতা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু ডিভাইস উদ্ভাবন করা হবে। বিশ্বজুড়েই কিছু ডিভাইস সচারাচর পাওয়া যায়, কিন্তু তা খুবই ব্যয়বহুল। তারপরও আবার এটা দিয়ে কেবল একধরণের ডাটা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের কৃষকদের পক্ষে তো এতদাম দিয়ে তা কেনা সম্ভব নয়। এই পাইলট প্রকল্পে মাধ্যমে একটি সাশ্রয়ী ডিভাইস নিয়ে আসব, যা কৃষকরা সামর্থ্যরে নাগালে থাকবে। যাতে একজন বা একাধিক কৃষক মিলে ওই ডিভাইসটি কিনতে পারবে।

এই ডিভাইসটি নিজ থেকে পিএইচ লেভেল বলে দেবে, ক্ষতিকারক পোকামাকড় আছে কিনা তা বলে দেবে। এই ডাটাগুলো চলে আসবে সার্ভারে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ-সুবিন্যাস করে সফটওয়ার উন্নয়ন করে তা অ্যাপসে যাবে। কৃষিবিদরা ডাটা বিশ্লেষণগুলো করে যথাযথ পরামর্শটা অ্যাপসে যুক্ত করবেন। কৃষকদের কাছে অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি পরামর্শটা চলে যাবে।

ধারণা করা হচ্ছে, যদি পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প সফল হয় তাহলে ফসলের ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। কারণ হচ্ছে রোগবালাইসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো যথাসময়ে চিহ্নিত করা যাবে ও যথাসময়ে তার প্রতিকার করা যাবে। অপরদিকে, উপাদান ব্যয়ও ২০ ভাগ কমবে। যার ফলে এটি আশা করা যায়, কৃষকরা ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ ভাগ লাভবান হবে।

প্রকল্পটির এই প্রত্যাশ্যা বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হয়, সেজন্য টানা ৬ মাস এনিয়ে ধারাবাহিক গবেষণা চলবে। বাকী সময়ে অন্যান্য বিষয়মূহ সম্পন্ন হবে। সামগ্রিভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে তা আরও একধাপ অগ্রগতি হবে।

অনুষ্ঠানে চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স ইয়াং শি চাও, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন এর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমান। 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer