ঢাকা : খুচরা টাকা সরবরাহের নামে রাজধানীর পরিবহনগুলোতে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। রাজনৈতিক আশ্রয়ে সংঘবদ্ধ এই চাঁদাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, পরিবহনগুলোর শ্রমিকদের হাজিরার টাকা উঠিয়ে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ধারাবাহিক শ্রমিক অসন্তোষের জেরে চাঁদাবাজ চক্রের সঙ্গে বড় রকমের সংঘাতের আশঙ্কাও তৈরী হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, শিয়ামসজিদ আগারগাঁওসহ মিরপুর রোডে চলাচলকারী যানবাহনে চাঁদাবাজ চক্রের এই দৌরাত্ম্য চলছে।
পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের সুবিধার্থে গাড়ি সড়কে নামার আগেই বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে স্ব স্ব যানবাহনে খুচরা টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই খুচরা টাকা সরবরাহের নাম করে রাজধানীতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে তানভীর বাহিনীর ক্যাডাররা।
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সংঘবদ্ধ এই বাহিনীর কাছ থেকে খুচরা টাকা না নিলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপারকে নির্দয়ভাবে মারধর করা হয়। এমনকি খুচরা টাকা ভাঙিয়ে না নিলেও চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়।
ভূক্তভোগী একটি কোম্পানির এক চালক বলেন, দিনের শুরুতে কোম্পানির মালিকরা খুচরা টাকা দিয়ে দেয়। তাই বাইরে থেকে আমাদের টাকা খুচরা করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তানভীর বাহিনী আমাদের কাছ থেকে হাজারে ৫০ টাকা আদায় করে নেয়। প্রতিদিন প্রায় কয়েকশ যানবাহন থেকে এভাবে তারা দিনে ২ থেকে ৩ বার টাকা আদায় করছে। টাকা না নিলেই তানভীরের ক্যাডারা ড্রাইভার হেলপারদের মারধর করেন।
কয়েকদিন আগে মোহাম্মদপুর জাপানগার্ডেন সিটির সামনে টাকা না নিতে চাইলে তেতুলিয়া পরিবহনের এক শ্রমিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তানভীর বাহিনীর ক্যাডাররা।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, যানবাহনে এ চাঁদাবাজির জন্য মোহাম্মদপুরের স্থানীয় এক ওয়ার্ড কমিশনারের প্রত্যক্ষ মদদে তানভীর ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছে। আর ঈদকে সামনে রেখে এই বাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
পরিবহন মালিকরা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিবহন সেক্টরে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছিলো। অনেক ভালোভাবেই চলছিলো এ সেক্টর। কিন্তু তানভীর বাহিনীর মতো গজিয়ে ওঠা নতুন চাঁদাবাজদের জন্য আবার নৈরাজ্যের মুখে পড়তে যাচ্ছে এ সেক্টর। তারা এখনই এ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের মিরপুর অঞ্চলের আহবায়ক শাহজাহান বাবুলও চাঁদাবাজির এই অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরে কয়েক ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যানবাহনে চাঁদাবাজি করছে বলে শুনেছি। পরিবহন মালিকরা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পরিবহন নেতা।
চাঁদাবাজি সম্পর্কে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, নগরীর বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় কমিশনারকে বিষয়টি জানিয়েছি। এরপরও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। তাই আমরা এখন নিরুপায়।
এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
বহুমাত্রিক.কম