Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৫ ১৪৩১, সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪

কুটির শিল্পে স্বনির্ভর যশোরের শত পরিবার

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ১৯ জুন ২০১৫

আপডেট: ০১:২৯, ২১ জুন ২০১৫

প্রিন্ট:

কুটির শিল্পে স্বনির্ভর যশোরের শত পরিবার

যশোর: কাঠের তৈরি মোমদানি, ফুলদানি, মেয়েদের চুরির আলনা, কলস, বাটি, পাউডার কেস, বয়াম, ডিম সেট, আপেল সেট, হারিকেন, পেন্সিল ফুলদানি, চরকা, খুনতি, হামাম, পিঁড়ি, বেলুন, সিগারেটের এশ ট্রে, লেবু চাপা, ব্যাংক (ঘট), সিঁদুরের কৌটা, ধামাপাতি, কয়েলদানি, টিফিন বক্স, ট্রফিসহ বিভিন্ন নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরির কাজ তথা কুঠির শিল্প বদলে দিয়েছে হাজারো বেকার মানুষের ভাগ্য।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত কুটির শিল্পের মালিক-শ্রমিকরা বছর দশেক আগেও সংসারের খরচ চালাতে অন্যের জমিতে কামলা খেটেছেন। কাজের অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে কেটেছে অনেকের দিন। কয়েক বছরের ব্যবধানে মেধা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল, তেইশমাইল, কন্দপপুর ও মঙ্গলকোট গ্রামের বর্তমান চিত্র এটি। শুরুর দিকে আলতাপোল গ্রামের কয়েকজন বেকার যুবক বিভিন্ন কাঠ খোদাইয়ের যন্ত্রপাতি দিয়ে কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন।

পরবর্তীতে গ্রামের কিছু অংশে বিদ্যুতায়ন হলে মোটর বসিয়ে অনেক বেকার যুবক এ শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে এ শিল্পের বিকাশ দেখে পার্শ্ববর্তী তেইশমাইল, কন্দপপুর ও মঙ্গলকোট গ্রামের অনেক মানুষ এ শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন।

বর্তমানে এ তিন গ্রামে অন্তত ৪০০টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মালিক-শ্রমিক, কাঠ ব্যবসায়ীসহ প্রত্য ও পরোভাবে কমপে ২০ হাজার লোক জীবিকা নির্বাহ করছেন। এসব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গ্রামটির শতকরা ৬০ ভাগ বাড়িতেই কুটির শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় তিন থেকে সাত জন পর্যন্ত শ্রমিক রয়েছে। কারখানায় স্থাপিত মোটরের মাধ্যমে ছোট-ছোট কাঠের টুকরা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাহারি ডিজাইনের উপরোক্ত সামগ্রী।

এসব সামগ্রী চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, খুলনাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। ওইসব এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি কারখানায় এসে চাহিদা মোতাবেক মালামাল কিনে নিয়ে যান।

স্থানীয় তেইশ মাইল এলাকার কুটির শিল্প মালিক কবির হোসেন, শাহদাৎ, নজরুল, কাদের, বাবুল, নজরুল, জামান, রাজ্জাকসহ অনেকেই জানান, তাদের কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে কাঠ ও রংয়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং লোডশেডিংয়ের কারণে তারা তিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া এই শিল্পে ব্যাংক ঋণ না থাকায় অর্থ সংকটে ভুগছেন কিছু কারখানার মালিক।

আগে প্রতি সিএফটি কাঠ ৬০/৬৫ টাকায় কেনা হলেও এখন দাম বেড়ে ১৭০ টাকা হয়েছে। এ কাজে ব্যবহƒত রং আগে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো অথচ এখন দাম বেড়ে ২২০০ টাকা হয়েছে।

একই সঙ্গে দেড় টাকা দামের প্রতিপিস শিরিশ কাগজ এখন কিনতে হচ্ছে সাত টাকায়। তারা আরও জানান, কয়েকবছর আগেও প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাদেও প্রায় অর্ধেক টাকা লাভ হত। তবে, বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার কারণে লাভের পরিমাণ কমে গেছে।

কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গৌতম রায় জানান, বছর দশেক আগেও স্থানীয় দরিদ্র মানুষ কাজের অভাবে না খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। কুঠির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer