২০ জুলাই মহাকাশে যাচ্ছেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস। নিজের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের তৈরি মহাকাশযান নিউ শেফার্ড রকেটে ১১ মিনিটের জন্য মহাকাশে যাবেন তিনি। ঘণ্টায় ২ হাজার ৩০০ মাইলের গতিবেগে মহাকাশের উদ্দেশে পৃথিবী থেকে ছেড়ে যাবে এ রকেট।মঙ্গলবার মহাকাশে যাচ্ছেন শীর্ষ কোটিপতি বেজোস
২০০০ সালে রকেট টেকনোলজি নিয়ে কাজ করার জন্য আমাজনের পাশাপাশি ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজোস। কোটিপতি আর রকেট কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাক্টিকের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ অভিযাত্রার মাত্র ৯ দিন পর মহাকাশে যাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী বেজোস। তবে বেজোসের মহাকাশযাত্রায় যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা রিচার্ড ব্র্যানসনের ব্যবহার করা প্রযুক্তি থেকে আলাদা।
জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের রকেট ছোট, সাব অরবিটাল রকেট, ব্র্যানসনের প্রতিষ্ঠানের তৈরি রকেটের চেয়ে আলাদা। এটি লঞ্চ প্যাড থেকে সরাসরি লম্বালম্বিভাবে খুব দ্রুতগতিতে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ভার্জিন গ্যালাক্টিক রানওয়ে দিয়ে যাত্রা করেছিল। নিউ শেফার্ডের রকেট পৃথিবী থেকে অনেক ওপরে উঠবে। কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীর প্যানারোমিক ভিউ দেখবেন মহাকাশযানের যাত্রীরা, নিজেদের ভরশূন্য অনুভব করবেন।
এখন পর্যন্ত ১৫টি টেস্ট ফ্লাইট পরিচালনা করেছে নিউ শেফার্ড রকেট। জুনেই ঘোষণা দেন বেজোস ২০ জুলাই মহাকাশে যাওয়ার। ব্লু অরিজিনের পক্ষ থেকে পুরো মহাকাশযাত্রা লাইভ দেখানো হবে। রকেট আর ক্যাপসুলের মহাকাশযাত্রার পুরোটাই দেখা যাবে স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় আবহাওয়া ভালো থাকলে মহাকাশের উদ্দেশে পৃথিবী ছেড়ে যাবে জেফ বেজোসের রকেট। পুরো ইভেন্ট লাইভ স্ট্রিমিং করবে সিএনএন বিজনেস।
স্পেসফ্লাইট শব্দটি মাথায় এলেই মানুষ ভেবে বসে একটা মহাকাশযানে করে নভোচারী পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে, মহাকাশে ভাসছে। বেজোস আর তার সঙ্গের যাত্রীদের মহাকাশ ভ্রমণ একটি অন্যরকম। তারা শুধু ওপরে যাবে আবার নিচে নেমে আসবে, মাত্র ১১ মিনিটে। ব্লু অরিজিনের রকেট আর ক্যাপসুল টেক্সাসে ব্লু অরিজিনের কার্যালয়ের লঞ্চ প্যাডে থাকবে। শব্দের চেয়ে বেশি গতিবেগে এটি ওপরের দিকে উঠতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না রকেটটি বেশির ভাগ জ্বালানি শেষ করে ফেলে। এরপর ক্যাপসুলটি আলাদা হয়ে যাবে রকেট থেকে। ওপরে উঠতে থাকবে ক্যাপসুলটি।
কিছুক্ষণের জন্য যাত্রীরা নিজেদের ওজনহীন অনুভব করবে। এরপর আবারও ক্যাপসুলটি নিচে নামা শুরু করবে। নিউ শেফার্ডের ক্যাপসুলটি একটি প্যারাশুট ছাড়বে, যেটির গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ মাইল।
ভার্জিন গ্যালাক্টিক আর স্পেস এক্সের মহাকাশযাত্রার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
স্পেস এক্স পৃথিবীর কক্ষপথে পরিচালনার জন্য রকেট বানায়। অরবিটাল রকেটগুলোর ঘণ্টায় ১৭ হাজার মাইল পর্যন্ত গতিবেগ থাকে। একে কক্ষপথের গতিবেগ বলে। এই গতিবেগ মহাকাশযানকে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণের শক্তি দেয়, মহাকাশে গিয়ে আবার অভিকর্ষের জন্য দ্রুতই নিচে নেমে আসতে হয় না। স্পেস এক্সের মহাকাশযানগুলো এভাবেই তৈরি। স্পেস এক্সের স্পেস ফ্লাইটগুলো এভাবেই কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে নভোচারীদের আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন পর্যন্ত নিতে পারে স্পেস এক্স।
কিন্তু জেফ বেজোস আর রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশযানগুলো সাব-অরবিটাল রকেট। এ স্পেস ফ্লাইটগুলো এত দ্রুত যেতে পারে না। এত সময় মহাকাশে থাকতেও পারবে না। মার্কিন সরকারও মহাকাশের সীমা ৬২ মাইল পর্যন্তই নির্ধারণ করে দিয়েছে। মহাকাশে ভ্রমণ সবসময়ই বিপজ্জনক। এরপরও মহাকাশ পর্যটন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে শীর্ষ তিন ধনী ব্যক্তি। জেফ বেজোস, রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ প্রতিযোগিতায় আছে বিলিওনিয়ার ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্স।