Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপনের রায়

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ৯ নভেম্বর ২০১৯

প্রিন্ট:

বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপনের রায়

ভারতের অযোধ্যায় বহুল বিতর্কিত জমিতে মন্দির নির্মাণ আর মুসলমানদের জন্য আলাদা জমি দেওয়ার রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। শনিবার আলোচিত অযোধ্যা মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রায় দেয়। খবর এনডিটিভির

অযোধ্যার বিতর্কিত জমিটি নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার ঠিক ৭০ বছর পর রায় দিলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়, সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে হিন্দুদের জন্য মন্দির নির্মাণ করে দেওয়া হবে। মুসলমানদের জন্য শহরের অন্যত্র সুবিধাজনক জায়গায় ৫ একর জমি দেওয়া হবে মসজিদ নির্মাণের জন্য।

ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এর রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস আব্দুল নাজির। রায়ের প্রাথমিক অংশে আদালত বলেছে, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, সেগুলি নন ইসলামিক।

গত ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে অযোধ্যা জমি বিতর্কের শুনানি শেষ হয়। অযোধ্যায় ২ দশমিক ৭৭ একর জমির দাবি জানিয়েছে হিন্দু এবং মুসলিম উভয়পক্ষই। ১৯৮০ সাল থেকেই এই ইস্যুটি রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। ১৯৯২ সালের ১৬ শতকের বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয় দক্ষিণপন্থি সংগঠন। তাদের বিশ্বাস, ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমির ওপর তৈরি পুরোনো মন্দিরের ভগ্নাবশেষের ওপর করা হয়েছে সেটি। সেই সময়ে হিংসার ঘটনায় সারা দেশের ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেই জায়গায় মন্দির তৈরি করতে চায় হিন্দুরা, মুসলিম সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, মসজিদের ধ্বংসাবশেষের ওপর মসজিদ তৈরির কোনো প্রমাণ নেই। আগামী ১৭ নভেম্বর অবসর গ্রহণ করবেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এর আগেই এই রায় দেওয়া হচ্ছে।

অযোধ্যার আশপাশে অনেক গ্রামেই উড়ছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ ড্রোন। ৩০টি বোম্ব স্কোয়াড গেছে বৃহস্পতিবার রাতেই। অযোধ্যার অধিকাংশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। চলবে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেখানে ৪ হাজার আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ান পাঠিয়েছে। সেইসঙ্গে ১৬ হাজার পুলিশকর্মী। থমথমে শহরের অনেকে অশান্তির ভয়ে আগে থেকেই বাড়ির শিশু ও মহিলাদের সরিয়ে দিয়েছেন অন্যত্র। সোশ্যাল মিডিয়া এ নিয়ে কোনো পোস্ট দেওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন অযোধ্যার প্রশাসন। আশপাশের প্রতিটি গ্রামে ১০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। কোনো রকম উত্তেজক অবস্থা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাবে। সাম্প্রদায়িক দিক থেকে স্পর্শকাতর এলাকায় অনেক বেশি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় রেল তাদের কর্মীদের জন্য সাত পাতার নির্দেশিকা জারি করেছে। সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর মধ্যেই তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের জানিয়ে দিয়েছেন, তারা যেন প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে অত্যন্ত সংযত থাকেন।

১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছিল। বাবরি মসজিদ আর রাম মন্দির নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালাবন্ধ করে দেয়।

এরপর জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। পরে ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজার অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই সেখানে আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে- দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। এই রায়ের বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করে। একটানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেন সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer