ছবি- বহুমাত্রিক.কম
‘আমাদের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের ফলে মজুরির টাকা থেকে কাপড়, জুতা, মোদি ব্যবসায়ীসহ সকলের কাছেই চলে যায়। আর মালিক ম্যানেজারেরা টাকা পেলে সে টাকা দুর-দুরাত্মে চলে যায়। বকেয়া মজুরির টাকা পাওয়ার পরই সবাই স্থানীয় বাজারের প্রতিটি দোকানে যাচ্ছি। জিনিসপত্র কিনছি। সবার কাছেই টাকা যাচ্ছে। এই টাকা পাওয়ার পর পরই লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা’-কথাগুলো বলেন মৌলভীবাজারের ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগর ও আলীনগর চা বাগানের শ্রমিকরা।
সম্প্রতি চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ায় বকেয়া মজুরির টাকা পেয়ে দূর্গা পুজায় আনন্দে তারা উৎফুল্ল। চুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দু’ভাগে প্রদান করা হবে। দূর্গা পুজার আগে তাদের প্রথম অংশ ৩ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয় গত বৃহস্পতিবার। মজুরির এই টাকা পেয়ে শ্রমিকরা আনন্দিত হলেও বর্তমান বাজার দরের সাথে খুবই নগন্য বলে তারা দাবি করলেও এককালীন এই টাকা তাদের আনন্দ যুগিয়েছে। টাকা হাতে আসার পরই তারা পুজার কেনাকাটায় বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গত দু’দিন ধরে ভিড় করছেন।
জানা যায়, ২০১৯ সনের জানুয়ারীতে চা শ্রমিকদের দু’বছর অন্তর মজুরি চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। ফলে দীর্ঘ ২২ মাস পর গত ১৫ অক্টোবর তাদের দ্বিপাক্ষিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরিত এই চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে ২০১৯ সনের জানুয়ারী থেকে এবং চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চু্িক্তর মেয়াদ কার্যকর থাকবে। চা শ্রমিকদের পূর্বের দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১৮ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা নির্ধারিত হয়। নতুন চুক্তির ফলে গত ২২ মাসে মাথাপিছু প্রায় ৬ হাজার টাকা শ্রমিকদের পাওনা।
মালিক পক্ষ দু’কিস্তিতে পাওনা ৬ হাজার টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। গত বৃহস্পতিবার শমশেরনগর চা বাগানে প্রথম কিস্তি হিসাবে শ্রমিকদের ৩ হাজার টাকা হিসাবে প্রদান করা হয়। এই টাকা পেয়েই শ্রমিকরা পুজার মধ্যেও হাটবাজারে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে গেছে। গত দু’দিন ধরে বৃষ্টির মধ্যেও হাটবাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাদের বিচরন লক্ষ্য করা গেছে।
শমশেরনগর চা বাগানের মনি গোয়ালা, সন্তোষী র্যালী, দেওছড়া গীতা রবিদাস, কানিহাটি চা বাগানের মীনা ঘাটোয়ারা, সীতারাম বীন সহ শ্রমিকরা বলেন, পুজার সময়ে এই টাকা পেয়ে আমাদের কাজে লেগেছে। বর্তমান বাজার দরের তুলনায় আমাদের মজুরি খুবই অল্প। তারপরও এককালীন ৩ হাজার টাকা করে পাওয়ায় সন্তানদের কাপড় চোপড়, জুতাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিতে পারছি। এটি আমাদের জন্য বাড়তি আনন্দ যোগাচ্ছে।
বহুমাত্রিক.কম