Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধলাইয়ের ভাঙ্গনে ছয় পরিবার বিলীন, ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ২২ জুলাই ২০১৯

প্রিন্ট:

ধলাইয়ের ভাঙ্গনে ছয় পরিবার বিলীন, ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : ‘ধলাই নদীর ভাঙ্গনে আমাদের বসতবাড়ির মাটিটাও বন্যায় নিয়ে গেছে। এখন থাকার জায়গাটুকুও নেই। পার্শ্ববর্তী সৈয়দ শাহীন মিয়ার মোরগের খামারে থাকিয়া দিন কাটারাম। কই যাইমু, কই থাকমু কোন হিসাব পারাম না’-ক্ষোভে দু:খে কথাগুলো বলছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রামপাশা গ্রামের নদী ভাঙ্গনে নি:স্ব মনিন্দ্র মালাকার।

বন্যা পরবর্তী গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন ধলাই নদীর ভাঙ্গনকৃত রামপাশা এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,  টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে গত ১২ জুলাই শুক্রবার দিবাগত রাতে রামপাশা এলাকায় ধলাই নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দেয়। একদিনের ব্যবধানে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রোববার পুনরায় একই গ্রামে নতুন করে আরও একটি ভাঙ্গন দেখা দেয়। ফলে গ্রামের জয়ধন মালাকার, যোগিন্দ্র মালাকার, মনিন্দ্র মালাকার, সুনীল মালাকার, সরজিনী দেবনাথ ও লাইলী বেগমের বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। এই ছয়টি পরিবার পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মোরগের খামারে ঠাই নিয়ে কোনমতে দিন কাটছে।

শ্রমজীবি এসব পরিবারের কেউ কাঠমিস্ত্রি, দিনমজুর, টেইলারি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন তাদের আয়ের পথ বন্ধ। নদীর ভাঙ্গন ওই গ্রামের দু’টি ভৈরব থলি ও একটি দুর্গাবাড়ি বিলীন করে গেছে। গত এক দশকে গ্রামের পঁচিশটি পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রায় দু’শ কিয়ার জমি নদীর বিপরীত পাশে চলে গেলেও সেখানে তাদের আর অধিকার নেই। অন্যেরা সেসব স্থান নিজেদের দখলে নিচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণের পরিবর্তে পুণবার্সন ও নদীর সংস্কার কাজে বাঁক কেটে গতিপথ সোজা করে এবং মজবুত প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

রামপাশা গ্রামের জয়ধন মালাকার বলেন, নদী আমাদের সবকিছু নিয়ে গেছে। সন্তানাদি নিয়ে রামপাশা বালিকা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। যোগিন্দ্র মালাকার বলেন, গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রহিম এর একচালা টিনের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি।  নদী ভাঙ্গনে নি:স্ব হওয়া সুনীল মালাকার, লাইলী বেগম ও মনিন্দ্র মালাকার বলেন, ‘নদীর ভাঙ্গনে আমাদের শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। এখন মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও নেই। বন্যার এক সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা কিছু ত্রাণ ও কিছু চাল ছাড়া আর কিছুই পাইনি। আয় রোজগারও করতে পারছি না। ফলে অভাব অনটনে দিনযাপন করছি।’

ঢলের প্রবল ¯্রােতে ঘর ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রতœা পাল বলেন, ‘স্বামী নেই। নিজে টেইলারি করে সংসার চালাই। ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন পার্শ্ববর্তী নির্মল পাল চৌধুরীর ঘরে আছি। এক ছেলে মাস্টার্স পড়লেও এখন তার পড়ার টেবিলটাও নেই। কিভাবে যে দিন কাটাবো ভেবে পাচ্ছি না।’

কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার রাসেল মতলিব তরফদার নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় ৬টি পরিবার বিলীন ও ক্ষতিগ্রস্ত ১২০টি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০টি পরিবারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রামপাশার ওই এলাকায় গত ২৫ বছর ধরে শুধুমাত্র ২৫টি শব্দকর পরিবারই সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেছে। তারা এই পরিবারগুলো কোথায় গেছে বা কোথায় আছে তার কোন হদিস নেই।

কমলগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র মোঃ জুয়েল আহমদ বলেন, নদী ভাঙ্গন ও বন্যার সাথে সাথেই আমরা দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ ও নিজেদের পক্ষ থেকে ত্রাণ, চাল ছাড়াও সরকারিভাবে আসা চাল বিতরণ করেছি। এ বিষয়ে ইউএনও’র কাছে দাবি জানিয়েছি তাদের ঘর করে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সহায়তা প্রদানের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া ও বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিক তৈরী করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে এসব ব্যক্তিদের ঘর করে দেওয়ার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং পরিপূর্ণ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে সরকারিভাবে আসা চাল ও কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer