Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি

টি.আই সানি, শ্রীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২১ জুন ২০১৯

প্রিন্ট:

এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুর: পল্লী বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের নানা বিভ্রান্তি ও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলেও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে গাজীপুরে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের জন্য গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ কে সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মিটার স্থাপন সম্পন্ন করেছে তারা।

বাকী মিটার স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারে গ্রাহকদের নানা অভিযোগ উত্থাপন হলেও অচিরেই তা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রথম ৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে এ কর্মসূচী শুরু করে তারা। বিদ্যুতের অপচয় রোধ, বিদ্যুত ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন ও সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পরিকল্পনায় পরের অর্থবছরে তারা আরো ৫ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সংযোগ প্রদান করেন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ অবধি তারা ৫০ হাজার মিটার স্থাপন করতে সক্ষম হন। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো ৫০ হাজার মিটার স্থাপন করা সম্পন্ন হবে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ২ কোটি গ্রাহকের মধ্যে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে সরকারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজীপুরে এসব মিটার স্থাপন করা হচ্ছে।

এদিকে, প্রচলিত পোস্ট পেইড এনালগ বা ডিজিটাল মিটারের চেয়ে নতুন পদ্ধতিতে প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুতের বিল বেশী নেওয়া হচ্ছে এবং গ্রাহকরা নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন - এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করে প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহকরা বেশ কিছুদিন ধরে এসব মিটার স্থাপনের বিরোধীতা করছে। তারা এ ব্যাপারে শ্রীপুরের মাওনাতে মানব বন্ধন ও কালিয়াকৈরে বিদ্যুত অফিস ঘেরাও কর্মসূচী পালন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে গ্রাহকদের এসব অভিযোগ সত্য নয় এবং নতুন গ্রাহকদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন পল্লী বিদ্যুত সমিতি কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছেন, নতুন সিস্টেমে বেশী বিল কেটে নেবার কোন সুযোগ নেই। গ্রাহকরা যতটুকু বিদ্যুত ব্যবহার করবেন বিল সেই পরিমানই আসবে। নানা অসচেতনতার কারনে কিছু কিছু গ্রাহক সমস্যায় পড়লেও অধিকাংশ গ্রাহকরা নতুন পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট বলে জানান পল্লী বিদ্যুত সমিতি। তবে নতুন একটি সিস্টেম চালু করতে গেলে প্রাথমিক অবস্থায় কিছু সমস্যা থাকলেও পুরো সিস্টেমে গ্রাহক প্রতারিত হবার কোন সুযোগ নেই। কোন কোন গ্রাহকের লাইনে টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে বিল বেশী কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অনুমিত হলেও এ ধারনাটি সঠিক নয়। যেসব গ্রাহক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সমিতির লোকজন তাৎক্ষনিকভাবে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করে দিচ্ছেন।

গ্রাহকদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, পুরনো সিস্টেমে গ্রাহকরা যে পরিমান মাসিক বিল পরিশোধ করতেন, নতুন প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর তাদেরকে অনেক বেশী বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এছাড়া রিচার্জের জন্য পর্যাপ্ত স্টেশন না থাকায় বিদ্যুত অফিসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে রিচার্জ করতে হয়। এছাড়া মিটার স্থাপনের পর প্রতি মাসে আগের চেয়ে বেশী পরিমান মিটার ভাড়া কেটে নেওয়া হচ্ছে । আগে যেখানে মাসে ১০ টাকা মিটার ভাড়া দিতে হতো, এখন দিতে হয় ৪০ টাকা । এছাড়া অগ্রীম রিচার্জ সিস্টেমের কারনে চাকুরীজীবি বা ভাড়াটিয়ারা সমস্যায় পড়ছেন। এসব কারনে তারা প্রিপেইড মিটার স্থাপনের বিরোধীতা করছেন।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি -১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার যুবরাজ চন্দ্র পাল গ্রাহকদের নানা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, বিদ্যুত বিল বেশী কেটে নেওয়ার গ্রাহকদের অভিযোগ সঠিক নয়। এই সিস্টেমে বেশী বিল কেটে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। গ্রাহকরা যতটুকু বিদ্যুত ব্যবহার করবেন, ততটুকুরই বিল নেওয়া হয়। তবে গ্রাহকের বাসা বাড়ীর ওয়ারিং এ কোন ত্রুটি থাকলে কেক্ষেত্রে বিল বেশী আসতে পারে। এজন্য গ্রাহকদেরকে সচেতন হতে হবে। যেসব কারনে বিল বেশী আসার সম্ভাবনা থাকে, গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি ১ এর কর্মকর্তাগন গ্রাহকদেরকে সে ব্যাপারে অবহিত করে থাকেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর (অব:) জেনারেল মঈন উদ্দিন প্রত্যেকটি সমিতিকে এসব ব্যাপারে তীক্ষœ নজরদারীতে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। গ্রাহকরা এসব সমাধান করলে প্রকৃত বিলই আসবে বলে মনে করেন তারা।

তিনি আরো জানান, গ্রাহকের বাসার অয়্যারিং এ যদি ত্রুটি থাকে এবং নিউট্রাল লাইন যদি কমন থাকে, তবে সে লাইনের বিল যোগ হবে। ফলে বিল বেশী দেখাবে। তিনি আরো জানান, কোন বহুতল ভবনের সব নিউট্রাল যদি এক থাকে, আর্থিং এর তার, আইপিএস এর নিউট্রাল, সোলারের নিউট্রাল, জেনারেটরের নিউট্রাল, চেঞ্জওভার এর নিউট্রাল যদি মেইন সুইচের নিউট্রালের সাথে থাকে এবং কোন সাইট কানেকশনের নিউট্রাল যদি লোড সাইটের নিউট্রালে থাকে, তবে বিল বেশী আসতে পারে। অযথা লাইট, ফ্যান, টিভি , এসি চালানো থাকলেও বিল বেশী আসবে । এছাড়াও অত্যধিক গরম বা রোজার সময় বিদ্যুত বেশী ব্যবহারের কারনে বিল বেশী আসতে পারে। এসব ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। নতুন মিটার স্থাপনের সময় আমাদের লোকজন বোর্ডে এবং মেইন সুইচে কমন নিউট্রাল থাকলে তা আলাদা করে দেয় । এছাড়াও ঘরের ভিতরে কোন কানেকশন থাকলে এবং আমাদের লোকদেরকে না জানালে বিদ্যুতের বিল বেশী দেখাতে পারে। অতিরিক্ত মিটার ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী মিটার ভাড়া ৪০ টাকা নির্ধারন করেন। প্রকৃতপক্ষে এটি বেশী নয়। কারন একটি এনালগ বা ডিজিটাল মিটারের দাম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এর ভাড়া নেওয়া হতো ১০ টাকা । অন্যদিকে একটি প্রিপেইট মিটারের দাম ৬০০০ টাকা, এর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা । আর মাসে একবার প্রতি কিলোওয়াটে ডিমান্ড চার্জ নেওয়া হয় মাত্র ২৫ টাকা। এর বাইরে আর কোন চার্জ নেই। ফলে অতিরিক্ত চার্জ কেটে নেওয়ার যে অভিযোগ গ্রাহকদের, তার কোন ভিত্তি নেই।

প্রি-পেইড মিটার রিচার্জের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই- গ্রাহকদের এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, বর্তমানে এ সমস্যা নেই। গ্রাহকরা এখন বাড়ীতে বসেও নির্ধারিত এ্যাপস এর মাধ্যমে রিচার্জ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি জানান, বর্তমানে সদর অফিসে ৬টি পয়েন্ট অব সেল (রিচার্জ সেন্টার) এবং জোনাল অফিসে ৫ টি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি ব্যাংক ইতিমধ্যে গ্রাহকদেরকে বিনামূল্যে রিচার্জ করার সুযোগ দিচ্ছেন। বাকী ব্যাংকগুলিও অচিরেই শুরু করবে। এছাড়া রবি, এয়ারটেল ও গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমেও গ্রাহকরা রিচার্জ করতে পারবে। ইতিমধ্যে জেলায় রবি ৬১টি রিচার্জ স্টেশন এবং গ্রামীন ফোন ৭০টি রিচার্জ সেন্টার স্থাপন করেছে। ফলে মিটার রিচার্জের জন্য আর কোন সমস্যা থাকবে না । এছাড়াও আমরা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বুরুলিয়া, বারিয়া,নাওজোর এবং বিলাশপুরে অচিরেই রিচার্জ স্টেশন স্থাপন করবো। তিনি বলেন, গ্রাহকদেরকে সচেতন হতে হবে। কারো কোন সমস্যা দেখা দিলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষনিকভাবে আমরা তার সমাধান দিচ্ছি। তারপরও কোন গ্রাহক যদি মনে করেন, প্রিপেইড মিটারে বিল বেশী আসে, তাহলে বর্তমান চলমান পরিক্ষীত মিটার ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রিপেইড মিটার পাশাপাশি চালিয়ে টেস্ট করে দেখতে পারেন। তাহলে তাদের ভ্রান্ত ধারনা নিরসন হবে।

প্রি-পেইড মিটারের বিষয়ে কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা বললে সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা। এ ধরনের সিস্টেম আরো আগে হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করছেন তারা । তাতে অনেক বিদ্যুত সাশ্রয় হতো এবং সরকারের অনেক আয় হতো।
শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড (মাওনা চৌরাস্তা) এলাকার ব্যাবসায়ী সেলিম আহমেদ জানান, প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে কিছু গ্রাহকদের ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে। না জেনেই তারা এর বিরোধীতা করছে। মূলত এটি গ্রাহকদের জন্য অনেক ভাল হবে। এ সিস্টেমে বিল বেশী আসার কোন সুযোগ নেই। কারন গ্রাহকরা বিদ্যুত ব্যবহারে অনেক মিতব্যয়ী হবে। আগে তারা বিদ্যুতকে সরকারী সম্পত্তি মনে করে যাচ্ছে তাইভাবে ব্যবহার করতো। এখন আর অযথা বিদ্যুত ব্যবহার করবে না।

শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড এলাকার অপর গ্রাহক আব্দুর রহিম জানান, আগের চেয়ে আমার বিল এখন কম আসে। কারন আমি আগে বিদ্যুত ব্যবহারে সচেতন ছিলাম না, এখন অযথা বিদ্যুত চালিত বিভিন্ন ডিভাইস চালু রাখি না, ফলে বিদ্যুত ব্যবহারে আগের চেয়ে মিতব্যয়ী হয়েছি। এছাড়া চার্জিং এ কোন সমস্যা হচ্ছে না।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ মনে করছেন, গ্রাহকেরা অনেক কিছু না জেনেই প্রিপেইড মিটারের বিরোধীতা করছেন। বরং এ পদ্ধতিতে গ্রাহকেরাই সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করবেন। আগের মতো ব্যাংকে গিয়ে বিল পরিশোধের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হবে না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাসায় বসেই যে কোন সময় যেকোন প্রকার রিচার্জ করা যায়। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত রিচার্জ সেন্টার, রবি, এয়ারটেল, গ্রামীন ফোনের এজেন্টর মাধ্যমে রিচার্জ সুবিধা। এ পদ্ধদিতে শতভাগ বিদ্যুত বিল আদায়, গ্রাহকদের উন্নত, নির্ভরযোগ্য ও ঝামেলামুক্ত বানিজ্যিক সেবা প্রদানসহ ইতিবাচক অনেক সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানো ও বিদ্যুত বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতি কমবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer