
ফাইল ছবি
ফেসবুকে প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে পোস্ট দেওয়ায় তিউনিসিয়ার এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। প্রেসিডেন্ট কাইস সইদকে অপমান এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে এই রায় দেওয়া হয়। অভিযুক্তের নাম সাবের চৌচান। বয়স ৫৬ বছর। দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন তিনি। শিক্ষাগত যোগ্যতা কিছু নেই বললেই চলে। এ হেন সাবের চৌচানেকেই ফেসবুকে প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে তিউনিসিয়ার আদালত। এই পদক্ষেপের ব্যাপক সমালোচনা করছেন সেই দেশের মানবাধিকার কর্মীরা। সীমিত জ্ঞান নিয়ে মিথ্যা খবর ছড়ানো, প্রেসিডেন্ট, বিচার মন্ত্রীকে অপমান করা এবং বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতি আগ্রাসন দেখানোর অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিউনিসিয়ার নাবেউলের কোর্ট অফ ফার্স্ট ইনস্ট্যান্সে ১ অক্টোবর এই রায় দেওয়া হয়েছে।
বস্তুত এই রায়কে তিউনিসিয়ায় জমানা পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য চিহ্ন বলে মনে করা হচ্ছে। গত তিন দশকে এই দেশে কারও মৃত্যুদণ্ড হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট কাইস সইদ নিজেকে দেশের একচ্ছত্র নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরে ছবিটা বদলাতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পরে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা সমালোচকদের একে একে শায়েস্তা করেছেন প্রেসিডেন্ট সইদ। কিন্তু সাবের চৌচানের মতো এক অতি সাধারণ নাগরিককে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, খাতায় কলমে গণতন্ত্র থাকলেও আর কোনও রকম বিরোধিতা চলবে না প্রেসিডেন্ট কাইস সইদের রাজত্বে।
রায় শোনার পর সাবের চৌচানের ভাই জামাল বলেন, 'আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমরা একটি দরিদ্র পরিবার। আর এখন এই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুক্ত হলো নিপীড়ন ও অবিচার।' এই রায় ঘোষণার পর তিউনিসিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মানবাধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকেরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকের মতে, প্রেসিডেন্ট সইদের সমালোচকদের মধ্যে ভয় জাগানোর উদ্দেশ্যেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ দেশটিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আরও সংকুচিত করবে এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াবে। ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অগ্রগতির পথে ছুটতে শুরু করেছিল তিউনিসিয়া। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সইদ দেশকে ফের বিপরীত দিকে নিয়ে চলেছেন বলে দাবি সেই দেশের রাজনৈতিক মহলের।