
ফাইল ছবি
স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার (৯০) পড়ে গিয়ে ঊরুর হাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন গত ৫ জুন। এরপর ৭ জুন থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা কিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর অস্ত্রোপচার হতে পারে বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। তার দ্রুত সুস্থতার জন্য সকলের আশীর্বাদ কামনা করা হয়েছে।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক যতীন সরকার বেশ কয়েক মাস ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন। কয়েক মাস আগে বেশ কিছু কারণে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন।
অধ্যাপক যতীন সরকারের স্ত্রী কানন সরকার জানান, গত বৃহস্পতিবার (৫জুন) দুপুরে শোবার কক্ষে সামনে বারান্দা থেকে পত্রিকা আনতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। এরপর রাইট ফিমার নেক ফ্যাকচার হয়। এরপর গত শনিবার তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর শরীরে জটিল অস্ত্রোপচার হতে পারে।
মিসেস কানন সরকার বলেন, তাঁর স্বামী মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করেন। শারীরিক অবস্থা উন্নতি না হওয়া সত্ত্বেও এখন তিনি নিজ বাসায় চলে যেতে চাইছেন।
দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে আসেন নিজ জেলা নেত্রকোনায়। বর্তমানে বসবাস করছেন শহরের সাতপাই এলাকার নিজ বাড়িতে।
৯০ বছরের এই মনীষী বাংলার প্রগতিশীল চিন্তাধারার মাইলফলক। তাঁর লেখনীতে ইতিহাস, সমাজদর্শন ও লৌকিক সংস্কৃতির অনন্য সংমিশ্রণ বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলকে সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমানে শারীরিক সংকটে থাকলেও তাঁর দর্শন ও সাহিত্যকর্ম প্রজন্মান্তরে প্রেরণা জোগাবে।