ফাইল ছবি
মস্কো সফর করছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সফরে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন সহযোগিতা, বৈশ্বিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, গাজা-সংকট এবং ইরানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে রাশিয়ার বিনিয়োগ ও সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
শুক্রবার রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় সফরে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় পৌঁছান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। পরে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও বসেন। বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, বিগত কয়েক বছরে তেহরান ও মস্কোর মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতাও বেড়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। রাশিয়া ইরানের রেলপথে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। এই রেলপথ পরে আন্তর্জাতিক নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের (আইএনএসটিসি) একটি অংশ হয়ে উঠবে।
৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আইএনএসটিসি সমুদ্র, রেল ও মহাসড়কের একটি নেটওয়ার্ক, যা বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরকে কাস্পিয়ান সাগর ও ইরানের মাধ্যমে ভারতের মুম্বাইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য নকশা করা হয়েছে। ২০০২ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পে ১১ দেশ জড়িত। আইএনএসটিসি বাল্টিক অঞ্চল থেকে ভারতে পণ্য পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনবে।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে মস্কো ও তেহরান কাস্পিয়ান সাগরের একটি বন্দর আস্তারার সঙ্গে ইরানের রাশত শহরকে সংযুক্ত করতে একটি রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে। রুশ গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে এই রেলপথ নির্মিত হলে আইএনএসটিসির রেল নেটওয়ার্ক পূর্ণতা পাবে।
বৈঠকে পুতিন জানান, গত এক বছরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পুরো ক্ষেত্রজুড়ে সক্রিয় সহযোগিতায় যুক্ত আছি।’
জবাবে রাইসি কৃষি ও শিক্ষা খাতে দুই দেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘তবে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।’
এ সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন, ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন, যার সদস্য দেশগুলো হলো— রাশিয়া, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তান—এ বছরের শেষ নাগাদ ইরানের সঙ্গে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে সক্ষম হবে।
আলাপকালে পুতিন কৌতুক করে বলেন, তিনি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে গতকাল (বৃহস্পতিবার) তেহরানে অবতরণের কথাও ভেবেছিলেন। পুতিন বলেন, তিনি রাশিয়ায় ফেরার পথে ইরানের ওপর দিয়েই যাচ্ছিলেন এবং ভেবেছিলেন, তিনি চাইলেই তেহরানে অবতরণ করে এখনই রাইসির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তবে তিনি এমনটা করেননি। কারণ তাকে জানানো হয়েছিল যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে মস্কোর পথে রয়েছেন।
প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি জানান, ইরান যে কোনো সময় পুতিনের বিমানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। এ সময় তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রণের জবাবে পুতিন বলেন, তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং সময় এলে সুযোগটি কাজে লাগাবেন।