
ফাইল ছবি
‘রাষ্ট্র কোনো আবেগ দিয়ে চলে না’—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) আয়োজিত ‘চব্বিশের বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনা: শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যদিও কেউ বলছে যে, জুলাই গণঅভ্যত্থানের জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এখন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সেই আইনটা, আদেশটা জারি করতে পারেন। সেটা বৈপ্লবিক কথা, ইমোশনাল কথা, রাষ্ট্র কোনো ইমোশনের ওপরে চলে না। রাষ্ট্র আইনকানুন, বিধিবিধান, নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে চলে।’
গত ১৭ অগাস্ট জুলাই সনদ স্বাক্ষর হলেও তা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে এখনও সুপারিশ দেয়নি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।বুধবার এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশন বৈঠক করেছে। বৃহস্পতিবার আবার তাদের পরাশর্ম নেবে কমিশন, তার আগে নিজেরা কমিশন সদস্যরা নিজেরা বৈঠক করবেন।সুপারিশের প্রাথমিক খসড়ার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তাবায়নে একটি আদেশ জারি করা হবে। সনদের অধীনে গণভোট নিয়ে একটি অধ্যাদেশ করা হবে।
জুলাই সনদে যে পাঁচটি দল স্বাক্ষর করেনি, সেগুলোর মধ্যে এনসিপিও রয়েছে।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের বিষয়ে আলোচনা করেন।বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে ব্রিফিং করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নয়, আদেশ জারি করতে হবে প্রধান উপদেষ্টাকে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি কালকে বলতে শুনলাম যে, এটা ‘এক্সট্রা কন্স্টিটিউশনাল অর্ডার’ করে জাতীয় সনদ জারি করতে পারে এবং সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে বলা হচ্ছে যে, প্রধান উপদেষ্টা এটা জারি করতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টা সরকার প্রধান এবং সরকার প্রধানের ‘আইন জারির কোনো অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে নেই’, এ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষে সরকারের অনুমোদনে, মন্ত্রিসভার অনুমোদনে সেটা সংসদ না থাকলে, রাষ্ট্রপতি সে আইনগুলো পাশ করে থাকেন।এখানে সরকারিভাবে একটা বিষয় সরকার করতে পারে, সেটা হচ্ছে প্রজ্ঞাপন…প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে, গ্যাজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে যদি জুলাই সনদকে…খুশি হওয়ার জন্য যদি আদেশ বলে থাকেন, ঠিক আছে।’
‘কিন্তু যদি সত্যিকারভাবে আদেশ করতে হয় সংবিধান অনুসারে, আর্টিকেল ১৫২ যে সংজ্ঞা অনুসারে, আইনের সিরিয়াল হচ্ছে প্রথম সংবিধান, তারপরে যে জাতীয় আইন, তারপরে হচ্ছে ‘জাতীয় সংঘ প্রেসিডেন্টের’ অধ্যাদেশ, তারপরে হচ্ছে আদেশ, এরপরে বিধি-বিধান ইত্যাদি।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘গতকালকে একটি রাজনৈতিক দল বলেছে, এই যে জনমতের চাপে অবশেষে বিএনপি গণভোট মেনে নিয়েছে। আচ্ছা রাজনীতিতে মনে মনে সুখ অনুভব করলে তো অসুবিধা নেই, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের রেকর্ড এবং জাতির সামনে যে বক্তব্য আমরা দিয়েছি, বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সেই প্রস্তাবগুলো দিয়েছি…বলেছি এটা স্বাক্ষর হবে এবং ওই ঐহিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাক্ষরিত হবে। সেই জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে সম্পূর্ণ জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের ওপরে আমরা একটা সার্বভৌম জনগণের সম্মতি নেব।’
‘যাতে তার ওপরে আইনি ভিত্তির জন্য, কারণ ওটাই সর্বোচ্চ আইনি ভিত্তি, ‘আর্টিকেল সেভেন’ অনুসারে প্রজাতন্ত্রের সকল মালিক জনগণ হিসেবে এবং আর্টিকেল সেভেন সাবসেকশন টু হিসেবে বলা আছে যে, জনগণের অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত অর্থাৎ পরম অভিব্যক্তির উপরে সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সেই হিসেবে আমরা বলছি, আমরা জনগণের কাছে যাব, জনগণ যদি এটা হ্যাঁ বলে, এটা বাস্তবায়িত হবে এবং সেই সম্মতির জন্যই আমরা বলেছি একই দিনে একটি গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে, ছোট্ট একটা ব্যালটের মধ্যে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘শুধু জুলাই জাতীয় সনদের পক্ষে অথবা বিপক্ষে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলুন…এই প্রস্তাব তো আমাদের এবং সেখানে দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকি সবাই একমত হয়েছে এবং তারা সনদে স্বাক্ষরও করেছে। তবে এই দুটি রাজনৈতিক দলের একটি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাক্ষর করতে গিয়েছে। যেই দুটি রাজনৈতিক দলের কথা বলছি, আমি নাম নেব না। একটা রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করার জন্য সুযোগ খুঁজছে এবং তাদের কিছু দাবি দেওয়া আছে। তো সেই বিষয়ে অবশ্যই আলাপ আলোচনা যে পর্যায়ে হবে, আশা করি সেটা হয়তো তাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে একটা যৌক্তিক সমাধানও আসবে।’