ছবি: সংগৃহীত
নেত্রকোনা-৩ কেন্দুয়া এবং আটপাড়া উপজেলা নিয়ে আসনটিতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অসিম কুমার উকিল সমর্থক ও বঞ্চিত ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র বিরোধ এখন প্রকাশ্যে সংঘাতে রূপ নিয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের জুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধে লাঞ্ছিত হয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। শনিবার সন্ধ্যায় ইউপি চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান কাউসারের সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হন অসিম কুমার উকিল গ্রুপের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফারুক ছানা।
নেতাকর্মীরা জানান, অসিম কুমার উকিলের পক্ষের লোকদের সমন্বয়ে কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার দিন থেকেই অভ্যন্তরীন কোন্দল শুরু হয়। ত্যাগী নেতাদের মাইনাস করে গঠিত কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত গুছিয়ে কাজ করতে পারছে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পরেই নেত্রকোনা-৩ আসনের সদ্য সাবেক সাংসদ অসীম কুমার উকিলের অনুসারীরা নির্বাচন পরিচালনা কেন্দ্র কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু এতে সংক্ষুব্ধ হতে শুরু করে বঞ্চিত ত্যাগী নেতাগণ।
নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দুয়া উপজেলার জুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র কমিটি গঠনের বিষয়ে গত শনিবার বিকেলে জুড়াইল গ্রামে আওয়ামী লীগের এক বৈঠক বসে। এতে জুড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে কেন্দ্র কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান কাউসারকে আহ্বায়ক নিযুক্ত করে কেন্দ্র কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। তবে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল ফারুক ছানা। এতে সভায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে কেন্দ্র কমিটি আর গঠন করা হয়নি। লাঞ্ছিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল ফারুক ছানা।
লাঞ্ছিত আওয়ামী লীগ নেতা ছানা বলেন, 'গত ইউপি নির্বাচনে আমি সারোয়ার জাহান কাউসারের নির্বাচন করিনি। আমি নৌকার প্রার্থী ইসলাম তাজুর নির্বাচন করেছি। তখন থেকেই আমার পেছনে লেগে ছিল বিরোধী পক্ষ। শনিবার ইউপি চেয়ারম্যানসহ ছয়জন সিনিয়র নেতার সমন্বয়ে কেন্দ্র কমিটি করার প্রস্তাব করি। কিন্তু আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইউপি চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান কাউসারকে আহবায়ক করে কেন্দ্র কমিটি গঠনের প্রস্তাব আসে। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজুকে আহ্বায়ক করার প্রস্তাব করলে সভায় হট্টগোল দেখা দেয়। এ অবস্থায় সভা থেকে মোটরসাইকেল করে আমি নওপাড়া বাজারে আসা মাত্রই চেয়ারম্যান কাউসার ও তার লোকজন আমার ওপর হামলা চালায়।'
ইউপি চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান কাউসার বলেন, 'আমি এবং আমার পরিবারের সব সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। কিন্তু কেন্দ্র কমিটি গঠন উপলক্ষে সভায় আমাকে আহবায়ক করে কমিটি গঠনের জন্য তিন বার প্রস্তাব করা হলে তিনবারই বিরোধিতা করেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক ছানা। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে উপস্থিত লোকজন এবং আমার গ্রামের সমর্থকরা। নওপাড়া বাজারে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ছানাকে কয়েকটি চড়থাপ্পড় মেরেছে তারা। আমি তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছি।'
নওপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক ফকির বাচ্চু বলেন, 'শুনেছি নওপাড়া বাজারে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ছানাকে লাঞ্ছিত করেছে চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান কাউসার সমর্থকরা।' তাঁর ভাষ্য, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে কেন্দ্র কমিটি গঠন করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা রয়েছে। ছানাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি জানার পরই তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দুই- তিন দিনের মধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হবে।