Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২৩ ১৪৩১, মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪

প্রথমে গুলি করেছে, তারপর কাছে গিয়ে কুপিয়েছে জঙ্গিরা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৪ জুলাই ২০১৬

আপডেট: ০৪:১০, ৫ জুলাই ২০১৬

প্রিন্ট:

প্রথমে গুলি করেছে, তারপর কাছে গিয়ে কুপিয়েছে জঙ্গিরা

ছবি : রইটার্স

ঢাকা: শুক্রবার রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে যে জঙ্গী আক্রমণে বিদেশী নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হয়, তার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে সেই রাতের ঘটনাবলীর আরো নতুন বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে।

সেদিন রাত ন’টা থেকে পরদিন সকালে কমাণ্ডো অভিযানের আগ পর্যন্ত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ভেতরে কি চলছিল? জিম্মিদের কখন হত্যা করা হয়েছে? বেঁচে যাওয়াদের সাথে কি আচরণ করেছে জঙ্গিরা? হামলাকারীরা কতজন ছিল?

বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন ওই রেস্তোরাঁয় খেতে আসা শারমিনা পারভীন, আর ওই রেস্তোরাঁর একজন বাবুর্চি দেলোয়ার হোসেন।

শুক্রবার রাত ন’টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর চিত্রটা অনেকটা এই রকম। লন আর বসবার জায়গাগুলোতে বসে আছেন জাপানি অতিথিদের একটি দল, ইটালিয়ান অতিথিদের বড় একটি দল, ছোট ছোট দলে বিভক্ত আরো কিছু বাংলাদেশী এবং আরো দুটি দেশের নাগরিক। কারো কারো টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে, কারো জন্য খাবার তৈরি হচ্ছে।

রেস্তোরার একজন বাবুর্চি দেলোয়ার হোসেন, রসুইঘরে পৌঁছানো অর্ডারের মধ্যে পাস্তা, মাছ, গরুর মাংস এবং মুরগির মাংসের আইটেমের কথা মনে করতে পারলেন।

আর খেতে আসা অতিথিদের একজন শারমিনা পারভীন করিম, তখন তারা সপরিবারে বসে কেবলমাত্র খাবারের অর্ডার দিতে যাচ্ছেন। তার সাথে দুই সন্তান ও স্বামী বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম।“খাবার অর্ডার করতে যাব। মেন্যু দিয়ে গেছে। সেই মুহুর্তেই গোলাগুলির শব্দ।

"কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি তারা আমাদের সামনে। শব্দ শুনে যেটা বুঝলাম, ওরা বাইরে লনে এ্যাটাক করেই তারপর ভেতরে এসেছিল। আমাদেরকে হেড ডাউন করতে বলল। আমরা মুসলিম কিনা জিজ্ঞেস করল। ওই টেবিলে শুধু আমাদের ফ্যামিলিই ছিলাম” - বলছিলেন মিসেস করিম।

"তারপর আমাদের সামনে ও পেছনের টেবিলে যারা ছিল তাদের শুট করল এবং চাপাতি দিয়ে কোপানো শুরু করল। আগে গুলি করে তারপর কাছে গিয়ে কুপিয়েছে।”

মিসেস করিমের বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে শুক্রবার রাত নটার কিছু আগে বা পরেই লাশে পরিণত হয়েছিলেন হতভাগ্য ৭ জন জাপানী, ৯ জন ইটালিয়ান, একজন ভারতীয়, দুজন বাংলাদেশী এবং একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।

তারপর প্রায় সারারাত ধরেই একটি টেবিলে করিম পরিবারকে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের টেবিলে এনে বসানো হয় আরো দুজন তরুনী এবং দুই ব্যক্তিকে। তবে সকাল নাগাদ কমাণ্ডো অভিযানের আগেই তাদের বেরিয়ে যেতে দেয় জঙ্গিরা।এদিকে রাতে যখন গুলি করতে করতে সন্ত্রাসীরা রেস্তোরাঁয় ঢুকছিল, তখন দোতলার ফ্রিজ থেকে মাছ আনতে গিয়েছিলেন বাবুর্চি দেলোয়ার হোসেন। গুলির শব্দ পেয়ে তিনি আরো কয়েকজন সহকর্মীর সাথে দৌড়ে একটি বাথরুমে ঢোকেন। একটি বাথরুমে মোট ৯ জন।

হামলাকারীরা সেটা টের পেয়ে বাথরুমটির দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। ভোর পর্যন্ত ছোট্ট বাথরুমটিতে ঠাসাঠাসি করে কোনমতে প্রাণ রক্ষা করেন রেস্তোরার নয় কর্মী।

এক পর্যায়ে তারা নিজেদের জামাকাপড় খুলে ফেলেন। তারপর অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হলে ভোরে দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসেন, তখনও সন্ত্রাসীদের দখলে রেস্তোরাঁ, বেরিয়ে তারা সামনে পড়েন হামলাকারীদের। মি. হোসেন বলছেন, ৯ জনের ৩ জনই ভয়ে দোতলা দিয়ে লাফিয়ে পাশের ভবনে চলে যায়।

“আমাদের তিন জনকে ভেতরে নিয়ে যায়। ভেতরে দেখলাম অনেক রক্ত আর লাশ। সবাই ফ্লোরে পড়ে আছে”।

হামলাকারীরা চারজন ছিল উল্লেখ করে মি. হোসেন বলেন, “খবরে ছয় জন, সাত জন, আট জন দেখায়। কিন্তু আসলে ওরা চার জন ছিল।”

“তাদের হাতে বড় একটা অস্ত্র ছিল। ছোট পিস্তল ছিল একটা। আর একটা করে চাপাতি। তাতে রক্তের দাগ।”
এর কিছুক্ষণ পরেই প্যারা কমাণ্ডোদের অভিযান শুরু হয়। প্রাণ রক্ষার্থে আবারো লুকিয়ে পড়েন দেলোয়াররা। হামলাকারীদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেটা দেখার সুযোগ আর হয়নি তাদের।

কিন্তু রেস্তোরাঁর সাইফুল নামে যে নিহত কর্মচারীকে জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করছে পুলিশ, সে জঙ্গি নয় বলে দাবী করছেন মি. হোসেন এবং তাকে রেস্তোরায় প্রবেশের সময়ে হামলাকারীরাই হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করছেন তিনি।

দেলোয়ার হোসেন ও শারমিনা পারভীন দুজনেই বলছেন হামলাকারীরা তাদেরকে ধর্ম সম্পর্কে নানা উপদেশ দিয়েছিল।

শনিবার ভোরবেলায় দেলোয়ারকে কমান্ডোরা উদ্ধার করে পুলিশের হেফাজতে দেয়। রবিবার তিনি সেখান থেকে লক্ষীপুরের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন।

শারমিনা পারভীন ও তার সন্তানেরা পুলিশি হেফাজত থেকে বাসায় ফিরলেও এখনও ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয়ে রয়েছেন তার স্বামী হাসনাত করিম।

এরই মধ্যে হলি আর্টিজান রেস্তোরার পাশের ভবনে থাকা এক কোরিয়ান নাগরিকের করা ভিডিওর সূত্র ধরে হাসনাত করিমকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য।

রহস্য তৈরি হয়েছে হামলাকারীদের সংখ্যা নিয়েও।

বিবিসি বাংলা

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer