
ফাইল ছবি
আজ ১৪৩২ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে, নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহে এসেছে বর্ষা।
আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। এটি বর্ষা মৌসুমের অন্তর্ভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। বর্ষায় গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। নদীতে উপচে পড়া জল, আকাশে থাকে মেঘের ঘনঘটা। গ্রীষ্মের দাবদাহে বাংলার প্রাণ-প্রকৃতি যখন পোড়ে, প্রশান্তির ফল্গুধারা হয়ে তখন নামে বর্ষার ঝুম বৃষ্টি।
বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবুপাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য।
নগরজীবনে বর্ষণমুখর সন্ধ্যা অনেকের জন্য নানা ব্যঞ্জনে রসনাবিলাসের উপলক্ষ হয়ে আসে। অন্যদিকে শ্রমজীবী ছাপোষা মানুষের জন্য তা যাতনার। তবু বর্ষা বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুনের আবাহন।
সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষ তো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।
এদিকে আজ সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে চলছে বর্ষা বন্দনা। বর্ষা কথন, গান, নৃত্যসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে উদীচীর নিজস্ব শিল্পীদের অংশগ্রহণে চলছে এ আয়োজন।
মেঘলা আকাশ, টিপটিপ বৃষ্টি আর সবুজে ঢাকা প্রকৃতির মাঝে বর্ষার প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিচ্ছে এক ঝাক প্রকৃতিপ্রেমী। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে বর্ষা নিয়ে কবিতা পাঠ, সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্য পরিবেশনা আর কথামালায় সেজে উঠেছে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চ।
এ উৎসব শুধু বর্ষাকে বরণ নয়, বরং প্রকৃতি আর পরিবেশ রক্ষার আহ্বানও। গান, কবিতা আর নৃত্যের মাঝে উচ্চারিত হয়েছে—‘গাছ লাগান, প্রকৃতিকে ভালোবাসুন, ভবিষ্যৎকে রক্ষা করুন।’
শুধু শিল্পী নয়, দর্শকরাও উপভোগ করছেন প্রকৃতির এই রঙিন আবাহন। ছোট-বড় সকল বয়সী মানুষ গান আর নৃত্যের সুরে হারিয়ে যাচ্ছেন বর্ষার আবেশে।
স্রষ্টা আর প্রকৃতির মাঝে এক গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরার এ আয়োজন যেন বর্ষাকে ঘিরে বাঙালির হৃদয়ে জমে থাকা আবেগের এক অনন্য প্রকাশ।