
ছবি: সংগৃহীত
অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের প্রত্যন্ত এক জনপদে জন্মেছিলেন তিনি। মরমী সাধক ফকির সিরাজ সাঁইয়ের শিষ্যত্বে আধ্যাত্ম ও মানবতাবাদের দীক্ষায় হয়ে ডিঙিয়েছিলেন সর্বোচ্চ ধাপ। হাজার হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে সংগীতের মধ্য দিয়ে ভাববাদের যে চেতনা মূর্ত হয়ে উঠেছে তাকেই করেছিলেন তাঁর ‘লোকশিক্ষা’ ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম। তিনি মরমী সাধক ফকির লালন সাঁই।
জন্মের তিন শতাব্দিকালের সীমারেখায় সাঁইজী লালন কেবল এই অঞ্চলের মানুষকেই তাঁর গানের সুরে বেঁধেছিলেন তাই নয়, বিশ্বকেও নাড়া দিতে পেরেছেন প্রবলভাবে। সেকারণের হয়ত শাসনতান্ত্রিক সীমারেখায় বিভক্ত ভারতবর্ষের মাঝে সাংস্কৃতিক ও মনোজাগতিক ঐক্যের সুর ধ্বনিত হয় তাঁকে ঘিরেই।
লালন সাঁইয়ের প্রয়াণ দিবসকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার আয়োজিত ‘লালন সন্ধ্যা’ সেই আহ্বানকেই বহন করে এনেছে আবারও। লালন প্রয়াণ বার্ষিকীর এই আয়োজনে লালনগীতির কিংবদন্তি শিল্পী সদ্য প্রয়াত ফরিদা পারভীনকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
লালন অনুরাগী শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিকসহ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষেরা এই আয়োজনে যোগ দিয়ে লালনের মরমী সংগীতে অবগাহন করেছেন। মহান এই সাধকের সংস্কারমুক্ত উদার মানবতাবাদী জীবনদর্শনের সারকথা উৎকীর্ণ হয় আয়োজনে পরিবেশিত গান ও কথামালায়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, “ফকির লালন সাঁই ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁর জীবনদর্শন দুই দেশের মানুষকে ঐক্য ও মানবতার বার্তা দেয়।”
তিনি বলেন, ‘লালনের গান আজও বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে অব্যাহতভাবে কাজ করছে।’ হাই কমিশনার ঐক্যের এই মহত্তম অনুষঙ্গের চর্চাকে অব্যাহত রাখার প্রতি জোর দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ইন্ধিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক অ্যান ম্যারি জর্জের স্বাগত ভাষণের পর প্রয়াত শিল্পী ফরিদা পারভীনের প্রতি সঙ্গীত শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর স্বামী একুশে পদকপ্রাপ্ত গাজী আবদুল হাকিম। খ্যাতিমান এই বংশীবাদকের বাঁশির সকরুণ সুর শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। একক পরিবেশনা করেন ফরিদা পারভীনের শিষ্যা বিউটি এবং সমবেতকণ্ঠে লালনের গান পরিবেশন করেন অচিন পাখি কালচারাল একাডেমির শিক্ষার্থীরা।
অভিনেতা আফজাল হোসেনের সঞ্চালনায় লালন সংগীতে সুরের সুধায় একে একে আয়োজনকে পূর্ণতা দেন জ্যেষ্ঠ শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার ও টুনটুন বাউল ও অন্যরা। ‘লালন বিশ্বসংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্দেল মান্নান লালনের জীবন, দর্শন ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। আয়োজনের সবশেষ পরিবেশনা ছিল ব্যান্ডদল ‘লালন’-এর গান।