Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

কার্তিক ২১ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার ০৬ নভেম্বর ২০২৫

অনুমতি ছাড়া আড়িপাতা ও ইন্টারনেট বন্ধ নিষিদ্ধ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৬ নভেম্বর ২০২৫

প্রিন্ট:

অনুমতি ছাড়া আড়িপাতা ও ইন্টারনেট বন্ধ নিষিদ্ধ

ফাইল ছবি

আদালতের অনুমতি ছাড়া টেলিফোনে আড়িপাতা এবং যে কোনো অবস্থায় ইন্টারনেট বন্ধ নিষিদ্ধের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট খাতের আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ডিজিটাল শাসন কাঠামোয় দেশ নতুন যুগে প্রবেশ করবে বলে মনে করেন প্রযুক্তিবিদরা।

অধ্যাদেশের খসড়ায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছেÑ কোনো অবস্থাতেই টেলিযোগাযোগ সংযোগ, সেবা বা ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না। এমন কী, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক আন্দোলন, নির্বাচন বা নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতিতেও জনগণের মৌলিক ডিজিটাল সংযোগ অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। এ ছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া টেলিফোনে নজরদারি করা বা আড়িপাতা হলে আইন অমান্যকারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সর্বসাধারণের মতামত জানানোর সুযোগ : গতকাল বুধবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট অংশীজন এবং সর্বসাধারণের অবগতি ও মতামত প্রদানের উদ্দেশ্যে অধ্যাদেশের খসড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ওয়েবসাইটে

উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ই-মেইলে (ংবপৎবঃধৎু@ঢ়ঃফ.মড়া.নফ) অথবা সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকাÑ এই ঠিকানায় ডাকযোগে মতামত প্রদান করা যাবে।

এনটিএমসি বিলুপ্তির ইঙ্গিত : অধ্যাদেশের ৯৭(ক)(২)(গ) ধারায় বলা হয়েছে, পূর্ববর্তীকালের সব ইন্টারসেপশন সংস্থা ও টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেন্টার বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। এর ফলে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) স্বাধীন অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং তাদের সম্পদ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরিত হবে নতুন ‘কেন্দ্রীয় আইনানুগ ইন্টারসেপশন প্ল্যাটফর্ম (ঈখওচ)’-এ।

মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, টেলিযোগাযোগ আইনের ৯৭ ধারা দীর্ঘদিন ধরে অপব্যবহার করা হচ্ছিল। সামরিক সংস্থা ও গোয়েন্দা বিভাগগুলো নাগরিক যোগাযোগে নজরদারি চালাত। নতুন অধ্যাদেশ সেই আইনি ভিত্তি সরিয়ে দিচ্ছে।

কঠোর অনুমোদন প্রক্রিয়া : খসড়া আইনে ইন্টারসেপশন কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে উদ্দেশ্যের সুনির্দিষ্টতা, প্রয়োজনীয়তা, আনুপাতিকতা, বৈধতা ও জবাবদিহিতা। নজরদারি বা তথ্য সংগ্রহের যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে আদালত বা আধা-বিচারিক কাউন্সিলের লিখিত অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শুধু ফৌজদারি তদন্ত, নাগরিকের প্রাণরক্ষা, জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সীমিত সময়ের জন্য ইন্টারসেপশন করা যাবে। রাজনৈতিক, আদর্শিক বা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে নজরদারি চালানো স্পষ্টভাবে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে জীবনরক্ষার প্রয়োজনে সাময়িক নজরদারি চালানো গেলেও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদন নিতে হবে, অনুমোদন না মিললে কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

অবৈধ আড়িপাতায় কঠোর শাস্তি : অধ্যাদেশে বলা হয়েছেÑ অনুমোদন ব্যতিরেকে আড়িপাতা বা তথ্য সংগ্রহকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। অবৈধভাবে নজরদারি চালালে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাজেট কর্তনের সুপারিশ করা যেতে পারে।

সংসদীয় জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা : নজরদারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি আধা-বিচারিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনুমোদন ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়া তদারক করবে। প্রতিবছর জাতীয় ইন্টারসেপশন প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন ও প্রকাশের বিধান রাখা হয়েছে, যা নজরদারির প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।

নতুন যুগে প্রবেশ : প্রস্তাবিত খসড়াটি পাস হলে বাংলাদেশ ডিজিটাল শাসন কাঠামোর নতুন যুগে প্রবেশ করবে বলে মনে করেন ‘ভয়েস ফর রিফর্মের’ সমন্বয়ক ও প্রযুক্তিবিদ একেএম ফাহিম মাশরুর। খসড়াটিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে এমন স্পষ্ট অবস্থান যুগান্তকারী। তবে ইন্টারসেপশনের সংজ্ঞা ও আদালতের অনুমতি-সংক্রান্ত ধারাগুলো আরও স্পষ্ট হওয়া দরকার। তিনি বলেন, খসড়া টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫ শুধু প্রযুক্তিগত সংস্কার নয়; বরং এটি নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ভারসাম্য পুনর্নির্ধারণের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

ফাহিম মাশরুর বলেন, ইন্টারনেট বন্ধে নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারির ক্ষমতা কেন্দ্রীয়করণের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ডিজিটাল শাসন কাঠামো প্রবেশ করবে এক নতুন যুগে। এতে প্রযুক্তি হবে নিরাপত্তার সহায়ক, তবে স্বাধীনতার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়।

পরবর্তী ধাপ : ১০২ ধারা বিশিষ্ট এই খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে আগামী সপ্তাহে বহুপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ভাষাগত যাচাই শেষে আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যাচাই-বাছাই কমিটিতে যাবে, পরবর্তীতে আইন বিভাগের ভেটিং পেরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে।

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables