Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গুড়ের মেলা ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:১৭, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৭:০৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

প্রিন্ট:

চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গুড়ের মেলা ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি

যশোর :যশোরের চৌগাছায় খেঁজুর রসের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এক ব্যতিক্রমী খেঁজুর গুড়ের মেলার আয়োজন করেছে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন। মেলায় খেঁজুরের গুড়, পাটালিসহ খেঁজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরি নানা ধরনের পিঠা-পায়েসের স্টল দেয়া হবে। উপজেলার দুই শতাধিক গাছি মেলায় স্টল দেবেন বলে জানা গেছে।

১৬ ও ১৭ জানুয়ারি সোম ও মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরের ঈদগাহ ময়দানে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। যার ব্যাপ্তি থাকবে গোটা উপজেলা পরিষদ চত্বর। সোমবার সকাল ৯টায় মেলার উদ্বোধন হবে।

মঙ্গলবার মেলা উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ বৈশাখী মে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর রস ও গুড় নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে।যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন।বিশেষ অতিথি থাকবেন চৌগাছা

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান।
অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রতিযোগিতার পুরুস্কার বিতরণ ছাড়াও মেলায় মানসম্মত খেঁজুর গুড় ও পাটালি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সার্টিফিকেট, ক্রেষ্ট ও পুরস্কার এবং উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় সর্বোচ্চ খেঁজুর গাছ কাটা তিনজন করে গাছিকে পুরস্কৃত করা হবে।

এরই মধ্যে মেলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরকে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে। সমগ্র উপজেলাব্যাপী ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে। 
মেলা উপলক্ষে উপজেলার গাছি ছাড়াও দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের মধ্যেও এক প্রকার উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, শতশত বছর ধরে এ অ লে বিপুল পরিমান খেঁজুর গুড় উৎপাদন হলেও এ পর্যন্ত এমন কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি। তাদের দাবি বর্তমান চৌগাছার সৃজনশীল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা এখানে যোগদানের পর থেকে নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে কাছে টেনে নেন। তার সেই উদ্যোগের সাথে নতুন একটি সোপান ‘ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গুড়ের মেলা।
এমন ব্যতিক্রমী আইডিয়ার বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, আমি চৌগাছায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পরে জানতে পারি এই উপজেলার খেঁজুর রসের ঐহিত্য বিলুপ্তির পথে। খেজুর গাছও কমে গেছে, গাছির সংখ্যাও কমে গেছে। তখন আমার মনে হয় এই ঐতিহ্যকে যদি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে খেঁজুর রস ও গুড় অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতেই আমরা গাছিদের সাথে মতবিনিময় করি। তাতে এতো বিপুল সংখ্যক গাছি যোগদান করেন যে, আমরা বিস্মিত হয়ে পড়ি। সেখান থেকে গাছিদের উৎসাহ প্রদান করতে এবং এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই এই মেলা। তিনি বলেন, আশা করছি এই মেলার আয়োজন যশোরের ঐতিহ্য খেঁজুর রস ও গুড়কে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, খেঁজুর গুড় একটি পুষ্টিকর খাবার। চিনিতে যে ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেটা গুড়ে থাকে না। ফলে গুড় খাওয়া অনেকটাই নিরাপদ। উপজেলা প্রশাসন এ গুড়ের ঐহিত্য রক্ষায় যে মেলার উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে আমি একটি অত্যন্ত মূল্যবান প্রচেষ্টা বলে মনে করছি।

খেঁজুর গুড়ের মেলা বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, খেঁজুর গুড় আমাদের দেশের একটি অর্থকরী পণ্য। তবে খেঁজুর গাছ ও গাছি কমে যাওয়ায় বর্তমানের উৎপাদন নিম্নমুখী। সেক্ষেত্রে এই মেলা আমার মনে হয় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তানিছুর রহমান বলেন, গুড়ের মেলার আয়োজন আমার কাছে খুব চমকপ্রদ উদ্যোগ বলে মনে হয়েছে। আমরা ছোট বেলায় এ অ লে রস গুড়ের যে বিপুল উৎপাদন দেখেছি এখন তা প্রায় হারাতে বসেছে তাই এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী পৃষ্টপোষকতা দরকার। বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই মেলাও সেই উদ্যোগের অংশ।

মেলার বিষয়ে খুবই উৎসাহী উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের গাছি সেলিম। মেলার স্টল দেবেন জানিয়ে সেলিম বলেন, আমি এখনো ১৬০টি খেঁজুর গাছ কাটি। মেলায় আমি খেঁজুর গুড় ও পাটালি নিয়ে যাবো। মেলার জন্য বাদাম পাটালি, তিল পাটালি ও নারকেল পাটালি তৈরি করেছি। তিনি বলেন, মেলায় আমি খেজুর রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেও বিক্রি করবো বলে প্রস্তুতি নিয়েছি।

মেলায় রস থেকে গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা স্কাউটস গ্রুপও।
স্কাউটের অন্যতম সদস্য এইচএম ফিরোজ বলেন, মেলায় আমরা রস থেকে গুড় উৎপাদন করে বিক্রি ছাড়াও রস ও গুড়ের নানা পিঠা তৈরি করে বিক্রির স্টল দেয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছি।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড চৌগাছা শাখার ব্যবস্থাপক ফারুক আযম বলেন, গুড় একটি অর্থকারী ফসল। এটাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। রস ও গুড়ের এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমরা স্বল্পমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থাও করতে পারি

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer