
গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার ব্যবসায়ী সোহেল (৩৭) হত্যার দ্রুত বিচার চান তার স্বজনরা। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের পরিবার। হুমকির ঘটনায় কাশিমপুর থানায় সাধারণ ডায়েরীও করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে মৃতদেহ ডোবায় ফেলে রাখে ঘাতকরা। ঘটনায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর পারভীন আক্তার সহ ১১জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনের নামে কাশিমপুর থানায় একটি মামলা (নং ০৬, তারিখ ১০/০২/২০১৯ইং) দায়ের করা হয়।’
তিনি জানান, ‘ওই মামলায় বিগত ১১ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ইং তারিখে আসামী নাটোরের নলডাঙ্গা থানাধীন মোমিমনপুর এলাকার মৃত হানিফের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৮), জামালপুর সদর উপজেলার হাইচন্দা এলাকার মজিবুর এর ছেলে জাবেদ (৩০) ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন উত্তর পানিশাইল এলাকার নুরু উদ্দিনের ছেলে মনিরুল ইসলাম ওরফে মনু (৩২), ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ইং তারিখে গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পানিশাইল পলাশ হাউজিং এলাকার খান সাহেবের ছেলে মো: শাকিল (৩৯) এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানাধীন ফরিদপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে মাহাফুজুর রহমান মানিককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল।
সেই সাথে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন উত্তর পানিশাইল এলাকার নূর উদ্দিনের ছেলে মো: স্বাধীন (২৮), রফিকুল ইসলাম রফিক (৩৫), একই এলাকার মৃত. চান মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম বাবু (২৪), চাঁন মিয়ার মেয়ে ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর পারভিন আক্তার (৪০), পারভিন আক্তারের স্বামী মিনহাজ (৪৫) এবং ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন কবিরপুর দেওয়ানবাড়ি এলাকার বকুলের ছেলে পলাশ (৩০) আসামীগণ বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এসকল আসামী ছাড়াও বাবু (২৪) এবং রাকিব (২২) এখনো পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামী এবং শফিকুল ও জাবেদ ছাড়া সকলেই জামিনে বের হয়ে এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। কিন্তু আসামী জাবেদ ও শফিকুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।’
তিনি আরো জানান, ‘ঘরে তাদের সয়মা (১০), সাদিয়া (০৭) এবং নাদিয়া (৪) তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। যারা সকলেই এখনো নাবালক। তাদের নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। নিহতের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের দাবী বিজ্ঞ আদালত যাতে মামলাটির দ্রুত বিচার কার্য শেষ করেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
মামলার বাদী নিহতের মা আনোয়ারা বেগম জানান, ‘প্রশাসনের কাছে আমার একটাই দাবী আমি যেন আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন দেখে যেতে পারি।’
নিহতের বাবা বৃদ্ধ এমদাত হোসেন জানান, ‘জানিনা আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারব কিনা। তারাতো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছে এলাকায়। জামিনে বের হয়ে এসে আমার ও আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। এই বৃদ্ধ বয়সে আমার একটাই চাওয়া আমি যেন আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারি। সরকার সহ শংশ্লীষ্ট সকলের কাছে আমার দাবী আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই এবং দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাশিমপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা জানান, গেল তিন মাস আগেই এ মামলার চূরান্ত চার্জশিট দিয়েছি। চার্জশিটে কোনপ্রকার স্বজন প্রীতি দেখানো হয়নি। তদন্তে যা পেয়েছি আমি চার্জশিটে তাই দিয়েছি। এছাড়া দুইজন আসামী পলাতক রয়েছে। ওই দুইজনকেও চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ইং তারিখ সন্ধ্যায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার মো: এমদাদ হোসেন এর ছেলে ইট ও বালু ব্যবসায়ী মো: সোহেলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ পার্শবর্তী একটি ডোবায় ফেলে রাখে অভিযুক্তরা। ঘটনার পরেরদিন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন কাশিমপুর থানায় ১১জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
বহুমাত্রিক.কম