
যশোর: প্রকৃতির পালা বদলে আসে শীত কাল। প্রভাতে শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশার চাঁদর জানান দিচ্ছে শীতের আগমণী বার্তা। যশোরের যশ খেজুরের রস। শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাতে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে খেজুর গাছ কাটা শুরু করেছে। গাছিদের মাঝে খেজুরের রস সংগ্রহের ব্যাপক প্রস্তুতি।
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য এখন গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাটাকুটি চলছে। ধারালো দা (গাছিদা) দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়।যাকে বলে চাঁচ দেওয়া। সপ্তাহ খানেক পর নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। তার কিছুদিন পরই গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। সংগ্রহ করা হবে খেজুরের রস। তা দিয়ে তৈরি হবে লোভনীয় গুড় ও পাটালি।
বাঘারপাড়ার বেশির ভাগ গ্রামে চোখে পড়ে খেজুর গাছের বিশাল সমারোহ। জমির আইলে ও পতিত জায়গায় অসংখ্য খেজুর গাছ লাগিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। বাঘারপাড়া উপজেলা সদরের দোহাকুলা, মহিরন, লক্ষীপুর ও নারিকেলবাড়ীয়া প্রভৃতি গ্রাম জুড়ে রয়েছে খেজুরের গাছ। এই মৌসুমে খেজুরের রস দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ।
শীত যত বাড়বে, খেজুর রসের মিষ্টিও তত বাড়বে। শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ দিনের শুরুতে খেজুরের রস, সন্ধ্যা রস ও সুস্বাদু গুড়-পাটালী। বাড়ীতে বাড়ীতে খেজুুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা পায়েসসহ নাম না জানা হরেক রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরীতে আবহমান কাল থেকে খেজুর গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজ এলাকায় চলে পুরোদমে। এখন চলছে প্রস্তুতি। কৃষকরা জানান, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের আগা কাটা হয়। গাছের আগা কাটা শ্রমিকও সহজে পাওয়া যায় গ্রামে। ২৫০ থেকে ৩০০টাকা মজুরি নিয়ে তারা গাছ কাটেন। শীত মৌসুমের পুরো চার মাস তারা বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করেন। ওই সময় তাদের প্রতিদিন আয় হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা।
অনেক কৃষকের খেজুর গাছ কেটেও সংসার চলে। এ মৌসুমে ব্যাপারিরা ছাতিয়ানতলা ও খাজুরা বাজারে গুড়ের হাটে আসেন। তারা এসব হাট থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি কিনে সারা দেশে সরবরাহ করেন। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরিতে ব্যাপক নাম থাকায় খেজুরের গুড়-পাটালীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অন্যান্য জেলা ও দেশের বাইরেও।অনেকে দেশের বাইরেও সরবরাহ করেন যশোরের সুস্বাদু গুড়-পাটালী।
বহুমাত্রিক.কম