Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘যার হাত ধরে সে যেত বাড়ির পাশে আবাহনির মাঠে’

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৩ নভেম্বর ২০১৬

আপডেট: ২২:৫২, ৩ নভেম্বর ২০১৬

প্রিন্ট:

‘যার হাত ধরে সে যেত বাড়ির পাশে আবাহনির মাঠে’

ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা : ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সোহেল তাজ, যার বাবা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ চার জাতীয় নেতাকে ‘৭৫-এর এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।  

নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে এই স্মৃতিচারণ করেন সোহেল তাজ। তাতে তিনি শৈশবে বাবার সাথে তাঁর মধুর স্মৃতিগুলো হাতরে ফিরেছেন। একই সাথে একজন শিশুর সামনে তাঁর নিহত বাবার মরদেহ-সেইদিন কী অনুভূতির সঞ্চার করেছিল-তাও তুলে ধরেছেন তিনি।

পাঠকদের জন্য তা হুবুহু তুলে ধরা হল:

‘‘আজ থেকে ঠিক ৪১ বছর আগে এই দিনে একটি পাঁচ বছর বয়েসের ছোট্ট ছেলে হারাল তার প্রিয় বাবাকে। যার হাত ধরে সে যেত বাড়ির পাশে আবাহনির মাঠে। যার হাত ধরে ধানমণ্ডির সাতমাসজিদ রোডের রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে খুঁজে পেয়েছিল তার প্রথম স্কুল। টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আর জাতীয় পতাকা পরিবেশিত হলে যিনি সব সময় মনে করিয়ে দিতেন দাড়িয়ে স্যালুট করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে। যিনি কোমল ভাবে বোঝাবার চেষ্টা করতেন মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের কথা। যিনি এই ছোট্ট ছেলেটিকে একটি আত্মবিশ্বাসী দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার গুরুত্ব শেখাবার চেষ্টা করেছিলেন এবং অনুপ্রেরণা যোগানোর চেষ্টা করেছিলেন নানা কায়দায়।

এ ছেলিটির জীবনটা হঠাৎ করে পাল্টে গেলো একদিন। ছেলেটি দেখতে পেল একটি লাশ, তার বাবার লাশ। লাশটি রাখা হল একটি রুমে আর শেই লাশ দেকতে আসলো হাজার হাজার মানুষ। সেও অবাক হয়ে দেখতে লাগল সবার সাথে। পরে সেও গেল বনানি কবরস্তানে। সেখানে সবাই তাকে প্রথমে মাটি দিতে বল্য- সেও দিল। তার কাছে মনে হচ্ছে এটা যেন একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে সে ভেসে যাচ্ছে।

আস্তে আস্তে সময় পার হতে লাগলো আর সেই স্বপ্নের আবরণ ধিরে ধিরে কেটে যেতে লাগলো। তারপর থেকে তার মনে খালি প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তার কেন বাবা নেই? অন্য সবার তো বাবা আছে। আরও সময় পার হোল কিন্তু প্রশ্ন গুলো আরও জটিল হতে লাগলো। কেন মেরে ফেলা হোল তার প্রিয় বাবাকে? উনি কি অন্যায় করেছিলেন? ওনাকে জেলে কেন রাখা হয়েছিল? আর জেলখানায় মেরে ফেললো কারা এবং কেন? এই প্রশ্ন গুলো যখন তার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে তখন সে তার মাকে বলতে শুনত, “আমি আমার স্বামী হারিয়েছি আর আমার সন্তানরা তাদের বাবাকে হারিয়েছে, কিন্তু দেশ কি হারাল? আমাদের ক্ষতি থেকে দেশের আরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেল। 

শৈশবে বাবার সাথে সোহেল তাজ। বৃহস্পতিবার যখন জেলহত্যা দিবস শোকাবহ পরিবেশে পালন করছে জাতি তখন ফেসবুকে ঘুরছে এই ছবি

তারপর ৪১ বছর পার হয়ে গেল। ছোটবেলার সেই দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়েই বছর গুলো পার করল। সে বুজতে পারল যে তার সত্ত্বা তার সেই হারানো বাবার মাঝেই লুকিয়ে আছে।

আজ ৩রা নভেম্বর ২০১৬। আজ ধেকে ৪১ বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিলে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নে্তা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সারকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মুনসুর আলি, খাদ্য ও ত্রানমন্ত্রী এ এইচ এম কাম্রুজ্জামান।

বাংলাদেশ তার সত্ত্বা খুঁজে পাবে তখনই যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মুনসুর আলি, এ এইচ এম কামরুজ্জামানদের মত সকল নেতাদের আত্মত্যাগ, অবদান আমরা সঠিক এবং পৃথক ভাবে মূল্যায়ন করতে পারব। তাদের আত্মত্যাগ ও আত্মদান খুলে দিক ইতিহাশের সেই জানালা যার গভীরে ঢুকে এই জাতি খুঁজে পাবে তার সত্ত্বা।’’

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer