চিরনিদ্রায় শায়িত ড. ফরিদ আহমেদ। ছবি: বহুমাত্রিক.কম
ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে প্রথম ও নিজগ্রাম রাহাপাড়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অধুনা ভাওয়ালের পথিকৃত ইতিহাস গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ। গাজীপুরের আলোকিত এই গুণীজনের শেষ বিদায়ে শামিল হন দীর্ঘ দিনের সহকর্মী, আত্মীয়-পরিজনসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
তার আগে বুধবার ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীনধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নানিল্লাহি ওয়াইন্নাইহি রাজিউন)। নানা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে যশস্বী এই অধ্যাপক সর্বশেষ ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে কর্মরত ছিলেন।
১৯৬৫ সালের অধুনালুপ্ত ভাওয়াল পরগণার (আজকের গাজীপুরের জেলা) রাহাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফরিদ আহমেদ। গাজীপুরের ধীরাশ্রমে ও রাহাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে ফরিদ জি কে আদর্শ বিদ্যালয় খেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। আশৈশব ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি গভীর ভালোবাসা ফরিদ আহমদকে ইতিহাসের মানুষ করে তুলে।
বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজে ভূগোল বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও ভাওয়ালের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তাকে বার বার নিজ জনপদে টেনে এনেছে। শিক্ষাজীবনেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাওয়ালের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে প্রশংসা কুড়ান ফরিদ আহমদ। সরকারি কর্মকর্তা ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ড. ছায়েদ আলী ও কারুশিল্পী রাহিমা খাতুন দম্পতির পুত্র ফরিদ আহমদ বাবা-মার নামে হাতেম-রাহিমা স্মৃতি লাইব্রেরি ও সংগ্রহশালা গড়ে তুলেন।
রাহাপাড়া গ্রামে দ্বিতীয় জানাজায় সাধারণ মানুষের ঢল
পরিধিবহুল গবেষণা জীবনে ড. ফরিদ আহমদ ভাওয়ালের ইতিহাস, গাজীপুর জেলার ভৌগলিক পরিচয়, বাংলাদেশের নদ-নদী, গাজীপুর জেলার বিবরণ এবং গাজীপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থের লেখক। তাঁর গভীর অনুসন্ধানী গবেষণার মধ্য দিয়েই অধুনা ভাওয়ালের ইতিহাস সমকালীন ইতিহাস গবেষকদের কাছে জনপ্রিয় ও চর্চিত হয়ে আসছে। অসুস্থ অবস্থাতেও গেল কয়েকটি বছর তিনি গাজীপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য শীর্ষক প্রামাণ্য আকরগ্রন্থের পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশে ব্যাকুল ছিলেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গ্রন্থটি এখনো অপ্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে।
মৃত্যুকালে ড. ফরিদ আহমেদ স্ত্রী, পুত্র নির্ঝর ও কন্যা ইরিনাসহ অজস্র স্বজন-অনুরাগী রেখে গেছেন। খ্যাতিমান এই গবেষকের প্রয়াণে গাজীপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ফরিদ আহমেদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম
বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের শ্রদ্ধা
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. ফরিদ আহমেদের অকাল প্রয়াণে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদ। বুধবার বাদ আসর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম গাজীপুরের রাহাপাড়ায় গিয়ে প্রয়াত ফরিদ আহমেদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তার পূর্বে তিনি নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রখ্যাত এই গবেষকের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন। পরে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারে র সদস্যদের সমবেদনা জানান।