ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অকৃত্রিম বন্ধু, পশ্চিমবঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট, লেখক-গবেষক অধ্যাপক ডঃ অমিয় কে চৌধুরী (অমিয় কুমার চৌধুরী) আর নেই। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ৬টা ৪০মিনিটে কলকাতার রুবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
প্রয়াত ডঃ অমিয় কে চৌধুরীর ভ্রাতুষ্পুত্র ও কলকাতায় সাপ্তাহিক আলিপুর বার্তার সম্পাদক ডঃ জয়ন্ত চৌধুরী বহুমাত্রিক.কম-কে জানান, ‘সোমবার ভোররাতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে কাকুকে জরুরি ভিত্তিতে কলকাতার রুবি হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দিনভর উনার চিকিৎসা চলে। দুপুরের পর অবস্থার আরও অবনতি হয়।’
‘সন্ধ্যায় ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। অস্থির এই সময়ে তাঁর মতো দেশপ্রেমিক, গুণী লেখক-সমাজসেবকের চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি’-বলছিলেন ডঃ জয়ন্ত চৌধুরী।
পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ ও কলামিস্টের প্রয়াণে গণমাধ্যম, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ডঃ অমিয় চৌধুরীর প্রয়াণের খবরে হাসপাতালে ছুটে যান রাজ্য সরকারের আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস শূরসহ বিশিষ্টজনরা। তারা প্রয়াত চৌধুরীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ শিক্ষা ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অধ্যাপক অমীয় কে চৌধুরী তার সহকর্মী ও বন্ধুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে তা তুলে দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্নিত করতে। ২০১৩ সালের মার্চে একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো ৬৯ বিদেশি বন্ধুকে প্রদান করা ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্তদের মাঝেও প্রয়াত অমিয় কে চৌধুরীরও অন্যতম।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে ডঃ অমিয় কে চৌধুরীর হাতেও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। ওই অনুষ্ঠানে সম্মননা পাওয়া উল্লেখযোগ্য বিদেশি বন্ধুরা হলেন- কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারল্ড উইলসন (মরণোত্তর), একাত্তরের পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশি যৌথ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রমূখ।
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যজস্বী এই অধ্যাপক রাজ্যের উচ্চ শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি কলকাতাসহ ভারতবর্ষের প্রথম সারির সংবাদপত্রে সুদীর্ঘকাল সুনামের সঙ্গে কলাম লিখেছেন। বরেণ্য সমাজসেবক হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের দলমত নির্বিশেষে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত অমিয় কে চৌধুরী।
কলকাতার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ গবেষণাকেন্দ্রের সঙ্গেও ঘনিষ্টভাবে যুক্ত ছিলেন ডঃ অমিয় কে চৌধুরী। বাংলাদেশ ও বিহার নিয়ে তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ঐতিহাসিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত। তিনি কলকাতার প্রভাবশালী সাপ্তাহিক আলিপুর বার্তার প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম এই বন্ধুর প্রয়াণে বহুমাত্রিক.কম পরিবার গভীরভাবে শোকাহত।
বুধবার শেষকৃত্য
প্রয়াত ডঃ অমিয় কে চৌধুরীর শেষকৃত্য বুধবার কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সম্পন্ন হবে। এর আগে স্বজন-অনুরাগীদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গুণী এই শিক্ষাবিদ ও কলামিস্টের মরদেহ সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত রাখা হবে কলকাতার গলফ গ্রিন দূরদর্শন কেন্দ্র সংলগ্ন উদয় সদন হলে।
বহুমাত্রিক.কম