Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিশিষ্ট চিকিৎসক এম এ সিকদারের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:১৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বিশিষ্ট চিকিৎসক এম এ সিকদারের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ঢাকা : ন্যায়, সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার বিরল দৃষ্টান্ত ডা. এম এ সিকদারের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শনিবার ২১ জানুয়ারি নানা আয়োজনে এই চিকিৎসককে স্মরণ করা হয়।

১৯৯৭ সনের এই দিনে ৮৬ বছর বয়সে ঢাকায় পরলোকগমন করেন ডা. এম এ সিকদার । ১৯১১ সনে বাকেরগঞ্জের চড়াদি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়।

তিনি বরিশাল জেলা স্কুল ও বিএম কলেজ থেকে পড়ালেখা সমাপ্ত করে ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সনে তিনি ওই স্কুল থেকে এ্যানাটমি, ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রিতে অনার্স পেয়ে সিলভার মেডেল লাভ করেন। পরবর্তীতে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ছয় বছরের কোর্স সমাপ্ত করে এমবি ডিগ্রী লাভ করেন।

তার পূর্বপুরুষগণ প্রাচীন ইয়ামাদ রাজ্যের (বর্তমান সিরিয়ার আলেপ্পো) আলাখতুম নগরের বাসিন্দা ছিলেন। হেজাজের সৈয়দ কাজীগণের সাথে তাঁর মাতৃকূলের সম্পর্ক সুস্পষ্ট। তুর্কী সেনাদের সাথে চুগতাই পরিচয়ে ডাঃ সিকদারের পূর্বপুরুষগণ ভারতে আসেন এবং দিল্লির উত্তর ও কাশ্মিরে বসবাস শুরু করেন। ঐ সময় রাজশক্তির নির্দেশে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বাংলার দক্ষিণাঞ্চলে গমন করেন তাদের পূর্বপুরুষগণ। বাকেরগঞ্জ উপজেলার খয়রাবাজ, লেবুখালিসহ নানা স্থানে বেশ কটি জমিদারির মালিক ছিল এই পরিবার। পারিবারিক ঐতিহ্য রেখে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের জন্য আজীবন কাজ করছেন ডাঃ সিকদার।

ভারত বিভাগের পূর্বে হাতে গোনা যে ক’জন মুসলিম চিকিৎসক দেশের মুখোজ্জ্বল করে জনসেবায় ব্রতী হয়েছিলেন ডা. সিকদার তাদের অন্যতম। তিনি ছিলেন বৃহত্তর বরিশাল জেলার চতুর্থ মেডিকেল গ্রাজুয়েট। তাঁর ভাই ডাঃ হাফিজ প্রথম চার গ্রাজুয়েটদের একজন ছিলেন। সেই জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক এবং রাচি মেন্টাল হাসপাতালের প্রধান ছিলেন।

ডা. সিকদার ১৯৪৮ সনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এ্যানাটমির শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন এবং ১৯৫৩ সনের শেষভাগ পর্যন্ত এই কলেজের এ্যানাটমি বিভাগের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান তথা বিজ্ঞান সংক্রান্ত জ্ঞান উন্নয়নে ডাঃ সিকদারের ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে আছে তাঁর কাজে। তাঁর প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে শহীদ প্রফেসর রাব্বী, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বি. চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরউদ্দিনসহ আরো অনেকে রয়েছেন। সারফেস এ্যানাটমি নিয়ে তিনি বিশেষ কাজ করেছেন এবং স্বাস্থ্য প্রশাসনে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।

দেশের প্রতি ভালবাসা এবং মানবধর্মের প্রতি ভালবাসা তিনি প্রকাশ করেছেন তার নানা কর্মযোগের মাধ্যমে। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লে. সেলিম এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক, বিজ্ঞানী তথা অগ্রণী মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম এ হাসান তাঁর দুই কৃতি সন্তান। তারই প্রেরণায় তাঁর এক সন্তান শহীদ লে. সেলিম যেমন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে আলোকিত করেছিলেন তেমনি তেলিয়াপাড়া, ফেনী, পরশুরাম, বেলোনিয়া, ফুলগাজী এবং পরিশেষে আখাউড়া ও মিরপুর মুক্ত করে শহীদ হন।

তাঁর অপর সন্তান ডাঃ এম এ হাসান আখাউড়া যুদ্ধে ভ্যানগার্ড কোম্পানিকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়মিত বাহিনীর সদস্য হিসাবে সবার আগে ঢাকায় প্রবেশ করে বাবার কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেন। এই দুই সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠাবার কারণে এবং মুক্তিযুদ্ধে নানা সহায়তা দেবার কারণে ডাঃ সিকদারকে জেনারেল টিক্কা খানের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ডা. এম এ সিকদারের পৌত্র ডা. আদিব হাসান দেশের মেধাবী চিকিৎসকদের একজন।

ডা. সিকদারের সহধর্মিনী দক্ষিণাঞ্চলের ঘাতক দালাল কমিটির প্রধান বয়োবৃদ্ধা শহীদ মাতা (৯২ উর্দ্ধ) সালেমা বেগম এবং তাঁর পরিবার এই ক্ষণজন্মা মানুষটিকে স্মরণে রাখবার জন্য এবং তাঁর আত্মার মুত্তির জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া প্রার্থনা করছেন। ডা. এম এ সিকদার ছিলেন একজন আলোকিত মানুষ এবং তাঁর উত্তরসূরিরা সেই আলোকেই আলোকিত হয়েছেন। তারাও সমাজে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ডা. সিকদারের অবদান সমাজে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer