Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নওগাঁয় বিচারক সংকটে মামলার জট, বাড়ছে ভোগান্তি

আব্দুর রশীদ তারেক, নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ৮ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নওগাঁয় বিচারক সংকটে মামলার জট, বাড়ছে ভোগান্তি

নওগাঁ : মামলার তুলনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক না থাকায় নওগাঁয় বিভিন্ন আদালতে বাড়ছে মামলার জট। সেই সাথে রয়েছে আইনজীবীদের অনীহা। চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভিন্ন আদালতে প্রায় ৬০ হাজার মামলা জমে আছে।

এছাড়া পুরনো মামলার পাশাপাশি প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো এবং আইনজীবীদের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে বিচারপ্রার্থীরা জানিয়েছেন।

গত ৪ মে নওগাঁয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা জেলা জজশীপের বিভিন্ন আদালত পরিদর্শন এবং আইনজীবীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এছাড়া মামলার জট নিয়ে বিচারকদের সাথে কথা বলেন তিনি।

সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল পর্যন্ত নওগাঁ জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা ২৬ হাজার ৫৬৮ টি, ফৌজদারি মামলা ১০ হাজার ৪৪২ টি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২ হাজার ৯৪৪ টি এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে ১৬ হাজার ৮৪১ টি মামলা চলমান। এছাড়া জেলা জজ আদালতে ১৭টি বিচারকের পদে কর্মরত আছেন ১৩ জন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১১টি কোর্টের মধ্যে ৬টি কোর্টে বিচারক নেই। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক না থাকায় জেলা জজ দায়িত্বে আছেন।

আদালতগুলো মামলার ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। পুরনো মামলা নিষ্পতি না হওয়ায় মামলার দীর্ঘসূত্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে। মামলা জটের কারণে বিচারকার্য ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এতে বিচারপ্রার্থীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রাম থেকে শহরে আসা যাওয়া করায় বিচারপ্রার্থীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মামলা জটের কারণে বিচারপ্রার্থীদের পরবর্তীত তারিখ জেনে ফিরে যেতে হয়। প্রতিদিন হাজারো বিচারপ্রার্থীর আদালতের বারান্দায় দিনের দিনের পর বিচারের আশায় এসে ফিরে যাচ্ছেন।

জেলার ১১টি উপজেলায় প্রায় ৩২ লাখ জনসংখ্যা। সে কারণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। অথচ একেকটি মামলা নিষ্পতি হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এমনকি ১৯৯০, ৯১, ৯২ সালের মামলাও জমে আছে। দীর্ঘদিনেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার বাদী-বিবাদীর মাঝে সামাজিক শত্রুতা বাড়ছে। এরই জের ধরে অপরাধ প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলার মান্দা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে রেজাউল ইসলাম। গত ২০১০ সালে এলাকায় ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিয়ে তাকে আসামী করে ১ম যুগ্ম ও জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন একই ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আনছার আলী। গত ১৪ মে হাজিরা দিতে এসে দুপুর ২টার দিকে আদালতের বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন রেজাউল ইসলাম। এসময় কথা তার সাথে।

তিনি বলেন, ওই মামলায় ২৩দিন জেল হাজত খেটে জামিনে আছেন। মাঝে মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। একই এলাকায় বসবাস করায় তিনি নিজ থেকে বাদী পক্ষের সাথে মিমাংসা করার চেষ্টা করছিলেন। তবে দীর্ঘদিনেও বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়ায়, বিচারক না থাকাকে দায়ী করেছেন। অনেকবার হাজিরা দিতে এসে বিচারককে না পেয়ে ফিরে গেছেন। এছাড়া আইনজীবীরাও সময়ক্ষেপন করছেন।

সদর উপজেলার বেনীফতেপুর গ্রামের মৃত গফুর সরদারের ছেলে ইয়নুছ আলী গত ২০১২ সালে প্রতিবেশির সাথে ঝগড়া হয়। এতে প্রতিবেশি বাবু দুই মহিলাসহ ৬জনকে আসামী করে অতিরিক্ত চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে মামলা করেন। ইয়নুছ আলী বলেন, এক বছর আগে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল। আদালতে আসতে আর ভাললাগে না। কিন্তু আইনজীবীদের কারণে মামলাটি শেষ হচ্ছেনা। আবারও একটা তারিখ দিয়েছে। যে তারিখে মামলা শেষ হওয়ার কথা। তবে মামলা শেষ হবে কিনা তা নিয়ে শংশয় প্রকাশ করেন।

বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিচারক সংখ্যা বাড়ানো দাবী জানিয়েছেন। সেই সাথে আইনজীবীদের আন্তরিক ও ভূমিকা রাখতে হবে।

জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সরদার সালাহ উদ্দিন মিন্টু বলেন, ভৌগলিক পরিসীমায় এটি একটি বৃহৎ জেলা। জনসংখ্যাও বেশি। মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা কম। ফলে মামলার দীর্ঘসূত্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আদালতেরও স্বল্পতা আছে। তবে বিচারপ্রার্থীদের তাদের বিচার পাওনার ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের ত্রুটি থাকেনা। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য।

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা বলেছেন, সারা দেশে শতকরা ৮০ ভাগ মামলা বাদি অথবা বিবাদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার জড়িত। পাবলিক প্রসিকিউটর, গর্ভমেন্ট লিডার কার্যে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। পিপি, জিপিসহ সরকারী আইনজীবী এবং প্লিডারদের যে সম্মানি দেয়া হয় তা সন্তোষজনক নয়। এ কারণে তারা অন্যরকম ভূমিকা নিয়ে থাকেন। অনেক সময় পাবলিক প্রসিকিউটেরদের কক্ষে আসামী এবং আসামীদের লোকজনদের বসে থাকতে দেখা যায়। এই রকম পরিস্থিতিতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত সম্ভব হয়না।

তিনি আরো বলেছেন, পুরাতন মামলার তালিকা প্রস্তুত করে আগামী তিনমাসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। তা না হলে তিনি সেই বিচারকের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবেন বলে জানান।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer