ছবি : বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের চা বাগান গুলোতে জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন চা বাগানের নারী শ্রমিকরা। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শমশেরনগর চা বাগানে এক নারী ও শ্রীমঙ্গলের জাগছড়া চা বাগানে এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার শমশেরনগর চা বাগানে “চা-বাগানের নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে করনীয়" শীর্ষক একটি সচেতনতা মূলক আলোচনা সভা ও মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদিন সেকশনে দাঁড়িয়ে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে ও গাদাগাদি পরিবেশে বসবাস, পুষ্টিকর খাদ্য, সচেতনতা ও চিকিৎসার অভাব এসব নানা কারনে চা বাগান সমুহে নারী শ্রমিকদের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগর চা বাগানে বাসন্তী র্যালী ও শ্রীমঙ্গলের জাগছড়া চা বাগানে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী সুমতি নায়েক মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চা বাগান সমুহে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাব, স্যানিটেশন ও বাসস্থান সমস্যা প্রকট। ফলে জরায়ু ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শ্রমিকরা। চা বাগানের শ্রমিকরা বলেন, একমাত্র শমশেরনগর চা বাগানে ডানকান ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ব্যতীত সবকটি চা বাগানে এক একজন কম্পাউন্ডার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে ব্যাপক শ্রমিকরা চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সময় মতো চিকিৎসার অভাবে রোগব্যাধি বিস্তার লাভ করছে। তারা আরও বলেন, মাত্র ৮৫ টাকা মজুরিতে অর্থাভাবে বাইরে গিয়ে চা শ্রমিকদের পক্ষে চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
শমশেরনগর চা বাগান জাগরণ যুব ফোরাম -এর সভাপতি মোহন রবিদাস বলেন, জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শমশেরনগর চা বাগানে এক নারী ও জাগছড়া চা বাগানে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এটি চা বাগানে নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রকট। এ সমস্যা থেকে উত্তরনে ব্যাপক জনসচেততা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রদানের লক্ষ্যে ‘চা-বাগানের নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যস্থাপনা ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে করনীয়’ শীর্ষক একটি আলোচনা ও মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আলোচনা অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা নারীদের সচেতনতা সৃষ্টির পরামর্শ প্রদান করেছেন। পরে মেডিকেল ক্যাম্পে ঢাকার স্বনামধন্য বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারগণ দিনব্যাপী চা-বাগানের নারীদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।
জাগরণ যুব ফোরাম ও ওয়ান ফর অল এর আয়োজনে মেডিকেল ক্যাম্পে ওয়ান ফর অল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কামরুন্নেছা মিরার নেতৃত্বে মেডিকেল ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন ডাক্তার মো. ফয়জুল ইসলাম, জান্নাতুল মাওয়া, নিশা হক প্রমুখ।
তবে চা বাগানে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইয়াহিয়া বলেন, এ বিষয়ে কিছুদিন আগে প্রায় ২ হাজার নারীদের পরীক্ষা করে ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। তাদের ফলোআপও করা হচ্ছে। হাসপাতালে এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তবে চা বাগানের রোগীরা হাসপাতালে খুবই কম আসেন। আগে থেকে শনাক্ত করে চিকিৎসা করলে রোগীরা সুস্থ্য হয়ে উঠে।
বহুমাত্রিক.কম