ছেলেবেলায় বাবা বলতেন : ‘যুগের হাওয়া বদলে যাচ্ছে।’
আমি তখন ইতুল-বিতুল
মায়ের বুকেই স্বর্গ শহর,
আমি তখন এক্কা দোক্কা--
ঘর পেরুলেই ভোঁ ভোঁ দৌড়ে
গোল্লাছুটের মাঠ পেরোনো,
তেপান্তরের বন পেরিয়ে
নদীর জলে রোদ পোহানো ।
পথের মাঝে পথ হারিয়ে
কোন সুদূরে নিখোঁজ হওয়া,
হাতের কাছে বন্ধু পেলে
এক নিমিষেই শূন্যে হাওয়া ।
হাওয়া মানেই ঘুড়ির খেলা
হাওয়া মানেই ঝড়ের শেষে
আম কুড়োবার মিলনবেলা।
...যুগের হাওয়া বলতে বাবা
কী বুঝাতেন
তখন কি তার মানে বুঝতাম!
এখন আমি বুঝতে পারি
বুকের ক্ষত, মনের যতো
কষ্ট বালাই দেখেই আমি
বুঝতে পারি
যুগের হাওয়া বলতে বাবা কী বুঝাতেন!
চার্দিকে হৈ হল্লা দেখে
হরেক রকম ভন্ড দেখে
ভন্ডদের ওই কান্ড দেখে
ষন্ডলোকের দম্ভ দেখে
বাতাসভরা দূষণ দেখে
নদীর জলের মৃত্যু দেখে
বিষমেশানো খাবার দেখে
নেশায় ডুবা তরুণ দেখে
খুব সহজেই বুঝতে পারি
যুগের হাওয়া বলতে বাবা কী বুঝাতেন !
তেল মালিশের ভান্ড দেখে
চাটুকারের প্রলাপ দেখে
খ্যাতির মোহে পাগল দেখে
লোভ লালসার মাত্রা দেখে,
হিংসুটে মন স্বভাব দেখে,
পরের ধনে পোদ্দারি আর
বাহাদুরির কুরূপ দেখে
ঠিকই এখন বুঝতে পারি
যুগের হাওয়া বলতে বাবা কী বুঝাতেন !
নিয়ম ভাঙ্গার নিষ্ঠা দেখে
রীতিনীতির পতন দেখে,
লাঞ্ছনা আর পীড়ন দেখে
দুর্বলের ওই মাতম দেখে,
সহিষ্ণুতার কফিন দেখে
সহিংসতার প্রকোপ দেখে
নিষ্ঠুরতার চরম দেখে
আমি এখন বুঝতে পারি
যুগের হাওয়া বলতে বাবা কী বুঝাতেন।
ধূর্তজীবীর আচার দেখে
লেবাস পরা সন্ত দেখে
মিথ্যেলোকের বড়াই দেখে
দুষ্টু লোকের প্রভাব দেখে
মুখ ঢাকা ওই মুখোশ দেখে
আমি এখন বুঝতে পারি
যুগের হাওয়া বলতে বাবা কী বুঝাতেন !
বহুমাত্রিক.কম