যশোর : প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা দিয়েও কোন সুবিধা পাচ্ছে না ইজিবাইক মালিক ও চালকরা। ফলে ইজিবাইক কল্যাণ সোসাইটির কার্যক্রম নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইজিবাইক চালকরা জানিয়েছেন, গত চার মাসে কমপক্ষে ১০ জন চালক শহরের বিভিন্ন স্থানে হতহাত হয়েছেন। নামে মাত্র ‘বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির’ নামে একটি সংগঠন থাকলে তাদের কার্যক্রম চখে পড়বার মত নয়। প্রতিদিন চালকেরা ১০-২৫ টাকা হারে চাঁদা দিচ্ছেন সংগঠনকে। তবে এ টাকা যায় কোথায় তার কোনো খবর জানেনা চালকরা। অন্য শ্রমিক সংগঠন গুলি বিভিন্ন সহযোগিতা পেলেও ইজিবাইক চালকদের সংসঠনের জন্ম থেকে মালিকও চালকরা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
জানা গেছে, ১০ জানুয়ারি যশোর সদরের ফতেপুর ইউনিয়নের ধানঘাটা গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক নুর ইসলাম (৫০) কে মারপিট করে তার ইজিবাইক ছিনতাই করে সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। ১১ জানুয়ারি তার অবস্থার আশঙ্কাজনক হওয়ায় ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকায় রেফার করেন। তবে তিনি অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি’র পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগীতা পাইনি। এমনি তার ইজিবাইকটি উদ্ধারের জন্যে এগিয়ে আসেনি কল্যাণ সোসাইটি।
৭ ফেব্রুয়ারি চৌগাছা উপজেলার বুড়িন্দে গ্রামের মৃত নিছার আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক মোজাম্মেল (৪৫) ধর্মতলায় এসে ইজিবাইক রেখে ট্রেন লাইনের ধারে প্রসাব করতে বসে। এ সময় তিনি ট্রেনের সাথে ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে যশোর উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর তার পরিবারের সাথে অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির কোনো নেতা যোগাযোগ করেনি। নিহত মোজাম্মেলের ভাই ইউনুচ জানান, তার ভাই প্রতিদিন চৌগাছা থেকে এসে শহরে ইজিবাইক চালাতেন। দুর্ঘটনার পর অনেক ইজিবাইক চালক তাদের পরিবারের জন্যে সাহায্য করলেও সংগঠনের কোনো নেতাকে পাশে পাইনি।
২৮ মার্চ শহরতলী বিরামপুর কালীতলা এলাকার ইছাহক আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক ইমরান হোসেন (২২) বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে মাদক কারবারীরা । পরে স্থানয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। দীর্ঘদিন তিনি শহরে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। আর প্রতিনিয়ত অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির স্লিপে চাঁদা দিয়ে আসছেন । তবে কেনো এই টাকা আদায় করা হয় জানা নেই। তবে নিজের চিকিৎসার জন্যে অনেক টাকা ব্যায় হয়েছে। তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। আর কেও কোন দিন পেয়েছে বলে তার জানা নেই।
২০ এপ্রিল শহরের রেলগেটে পশ্চিমপাড়ার শহীদ মন্ডলের ছেলে ইজিবাইক চালক রুবেল মন্ডল (২১) কে মুজিব সড়কে জাগরণী চক্রের সামনে ছুরিকাঘাতে জখম করে সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হলে ওই দিন রাত তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। ২৪ এপ্রিল ঢাকায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুবেলের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তের জন্যে লাশ যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে একাধিক ইজিবাইক চালকদের দেখা গেলেও সংগঠনের কোনে নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সহযোগিতার কথা জনতে চাইলে মৃতের পিতা শহীদ মন্ডল জানান, অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির কোনো সহযোগিতা পাইনি তার পরিবার। ছেলের মৃত্যুর পর তার বাড়িতে ইজিবাইক চালকেরা আসলেও সংগঠনের কোনো নেতা আসেনি। পরিষ্কার জানিয়ে দেন তিনি কোন সহযোগীতা পাইনি।
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ইজিবাইকের ওপর ভর করে যশোর পৌরসভা ইজিবাইক প্রতি বছর চলাচলের জন্য ৭ হাজার টাকার টোকেন, অপরদিকে ইজিবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির ব্যানারে মাথাপিছু ইজিবাইক থেকে এককালীন ১৮শ’ টাকা গ্রহণ করা হয়। যশোর পৌরসভার বাইরে সড়কগুলো দিয়ে ইজিবাইক চলাচলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পয়েন্টে সিরিয়ালের নামে ইজিবাইক থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এ সব স্থানের মধ্যে যশোর শহরতলীর খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, মণিহার, মুড়োলী মোড়, চাঁচড়া চেকপোস্ট, আরবপুর, পালবাড়ি মোড়, শহরের গরীবশাহ সড়কের বকুলতলা, পুলিশ অফিসের অদূরে, শহরের সদর হাসপাতালের সামনে ঘোপ জেলরোড, নওয়াপাড়া রোড, সেন্ট্রাল রোড, হাসপাতালের মধ্যে, সিভিল কোর্টের সামনে, চৌরাস্তা মোড় থেকে শুরু করে অসংখ্য স্থানে ইজিবাইক মালিক, শ্রমিক সমিতির নামে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আর সব থেকে বেশি চাঁদা আদায় করা হয় শহরের দড়াটানা মোড় থেকে।
ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে কারেন্ট টিপের কথা বলে সিন্ডিকেট আদায় করছে আড়াই থেকে তিন শ’টাকা। অর্থাৎ সিন্ডিকেটে এই টাকা দিলে তাকে দড়াটানা মোড়ে কোন সিরিয়ালের জন্যে অপেক্ষা করতে হবেনা। আসবে আর মুহুর্তের মধ্যে ইবিজাইকে যাত্রী ভরে চলে যাবে তার নিদৃষ্ট গন্তব্যের পথে। মণিহার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাশীন দলের এক নেতার নাম ব্যবহার করে স্থানীয় কামরুল নামে এক দুস্কৃতকারী নেতৃত্বে তরিকুল ও দিদার নামে দু’যুবক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে চাঁদা আদায় করছে।
বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান সুমন জানান, সহযোগিতা পাবার প্রথম শর্ত হচ্ছে সংগঠনের সদস্য হতে হবে। বর্তমান তাদের সদস্য সংখ্যা দু’হাজারের উপরে। সদস্যদের বাইরে চাঁদা আদায়ের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, সারাদেশে একই নিয়ম। আটোবাইক চালালে সংগঠনের চাঁদা দিতে হবে। যেমন ধরেন, বাস, ট্রাক, প্রাইভেট, প্রাভভেট কারকে সকল জেলায় কিন্তু চাঁদা দিতে হয়। তবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে চালকের মৃত্যুতে এক কালীন ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। সংগঠনের কেনো সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে ৫শ’টাকা থেকে ১১টাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করা হয়। ২০১৮ সালে কত জনের সহযোগিতা করা হয়েছে জানতে চাইলে সুমন জানান, এখন মনে নেই। খাতা দেখে জানাতে হবে।
বহুমাত্রিক.কম